বিবেকহীন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান : রাষ্ট্রপতি

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ যেসব বিবেকবর্জিত অসাধু ব্যবসায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

২৯ জুন বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে ও নিম্নমানের পণ্যদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারিত করছে।

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মানুষের সাথে প্রতারণা করবেন না। সৎ ও সাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের সরকারের দরজা সব সময়ই খোলা রয়েছে। আমাদের সরকার অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’ ব্যবসাকে একটি মহৎ পেশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামেও ব্যবসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আজ সৎ ও ভাল ব্যবসায়ীদের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সুপার স্টোরের পণ্যের গায়ে যখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখা লোগো দেখি, তখন আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু আবার যখন ভেজাল বা নিম্নমানের কারণে বিদেশে বাংলাদেশী কোন পণ্য নিষিদ্ধ হয় বা বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয় তখন বাণিজ্যিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হয়।’

রাষ্ট্রপতি এ সময় কিছু খাবারের মান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট দেশীয় বাজার থেকে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের পণ্যগুলো প্রত্যাহারে কতৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।

আব্দুল হামিদ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মানের সঙ্গে আপোষ না করতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পাশাপাশি অন্যান্য খাতের মত দেশের শিল্প খাতে মানসম্পন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক উন্নতি দেখতে পেয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সময়োপযোগী শিল্প-বান্ধব নীতি ও কর্মসূচির কারণে মানসম্পন্ন শিল্পায়নের একটি অথ্যায় দেশের রপ্তানি আয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের শিল্পখাত অবদানের কারণে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপি ৪০ শতাংশে উন্নিত এবং ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে আরো বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে বেসরকারি খাত এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) এক সংখ্যার সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন এবং অগ্রাধীকার ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

আব্দুল হামিদ দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এসকল অঞ্চলে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং রপ্তানি বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।

শিল্পায়নের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসরকারি খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাত যত শক্তিশালী হবে শিল্পায়নের গতি ততই বৃদ্ধি পাবে।’

মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য, তেল, গ্যাসসহ সমুদ্রে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এই সম্পদ ব্লু ইকোনমির ব্যাপক বিস্তৃতি এবং বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘সফটওয়ার তৈরি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ, হিমায়িত মাছ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক, ওষুধ, প্লাস্টিক, আসবাবপত্র, দেশীয় বস্ত্র, পাট ও পাটের তৈরি পণ্য, কৃষি পণ্য, পর্যটন, আউট সোর্সিং, অটোমোবাইল, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও মহাকাশ গবেষণাসহ বিভিন্ন সেক্টরের বিকাশের সম্ভাবনা অন্বেষণে বিনিয়োগের বিরাট সুযোগ রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম এবং রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি পরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন শিল্প ইউনিটের ১৪ জন প্রতিনিধির হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

ভারী শিল্প, মাঝারি শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প ও হাইটেক শিল্পসহ সকল বৃহৎ সেক্টরকে সমন্বিত করে ৬টি বিভাগে এই পুরস্কার দেয়া হয়।

বৃহৎ শিল্প বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তপন চৌধুরী, এনভয় টেক্সটাইল লি.-এর চেয়ারম্যান মোবারক আলী।

মাঝারি শিল্প বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন- গ্রীন টেক্সটাইল লি.-এর এমডি তানভীর আহমেদ, ডি এন্ড এস প্রিটি ফ্যাশন লি.-এর এমডি রাজিন আহম্মদ ও জেএমই এগ্রো লি.-এর এমডি চৌধুরী হাসান মাহমুদ।

ক্ষুদ্র শিল্প বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন- অকো টেক্স লি.-এর এমডি প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, এপিএস এপারেলস লি.-এর এমপি মো. শামীম রেজা ও বিএসপি ফুড প্রডাক্ট (প্রাইভেট) লি.-এর এমডি অজিত কুমার দাস।

অতি ক্ষুদ্র শিল্প বিভাগে পুরস্কার পান- স্মার্ট লেদার প্রোডাক্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক বেগম মাসুদা ইয়াসমিন উর্মি। কুটির শিল্প বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন- কোর দ্য জুট ওয়ার্কস এন্ড প্রতিবেশি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কুটির শিল্প উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক বার্থ গীতি বারোই। তাছাড়া, হাই-টেক শিল্প বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন- সার্ভিস ইঞ্জিন লি.-এর চেয়ারম্যান এএসএম মহিউদ্দিন মোমেন ও নেসানিয়া লি.-এর মালিক বেগম রোকসানা পারভীন। সূত্র:বাসস