বঙ্গবন্ধুকে কৃতজ্ঞতা জানাতে জামালপুরে হতে যাচ্ছে চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের মিলনমেলা

মাহমুদুল হাসান মুক্তা, জামালপুর প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

তৎকালীন পূর্ব বাংলার চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতি বর্তমান বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির ৭০ বছর পূর্তিতে জামালপুরে সারাদেশের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের অংশগ্রহণে জাতির পিতার সম্মানে ‘শেখ মুজিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী মিলন মেলা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগামী ১৪ জুলাই জামালপুরে নির্মাণাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম স্টেডিয়াম সংলগ্ন জামালপুর জিলা স্কুল মাঠে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী (দপ্তরী) মো. হেলাল উদ্দিন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো সারা দেশের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মিলনমেলা জামালপুরে আয়োজনের উদ্যোক্তা হিসেবে গত ১২ মে জামালপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর উপস্থিতি এবং সার্বিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান, জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের এই মিলনমেলা আয়োজনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপারিশ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আকুল আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সারাদেশের তিন লক্ষাধিক চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী এ মিলনমেলায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে এবং তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন।

চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামালপুরের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী মো. হেলাল উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেওয়া আবেদনে জানিয়েছেন, তৎকালীন পূর্ব বাংলার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানি শাসকদের জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনের ডাক দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন করেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা উপাচার্য্যের বাস ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এ ধর্মঘটে নেতৃত্বের কারণে ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুচলেকা দিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব বহাল রাখার নির্দেশ দিলেও বঙ্গবন্ধু তা মানেননি। তখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার ও ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনের থাকার ঘোষণা দিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় সকল জেলা ও মহকুমায় কমিটি করে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এ আন্দোলনে যুক্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে ঢাকার অন্যান্য সরকারি দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে মিছিল সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট থেকে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব পুনর্বহালের চাপ সৃষ্টি করেন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির পথ চলা শুরু হয়। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালের ১৪ জুলাই আব্দুল আজিজকে সভাপতি ও সামেজ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রথম সংগঠন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতি নামে খ্যাতি লাভ করে। যা বর্তমানে বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি নামে পরিচিত।

চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী মো. হেলাল উদ্দিন আরো জানান, পাকিস্তানী শাসকদের সকল প্রকার ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৎকালীন সময়ে আমাদের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সব ধরনের আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত থেকে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই আমরা সারাদেশের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মিলনমেলা জামালপুরে আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ আমার এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের এই মিলনমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিয়েও তারা কাজ করছেন। তিনি এ অনুষ্ঠান আয়োজনে জেলা প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং জামালপুর জেলাসহ সারাদেশের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি এবং সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।