মেলান্দহে অপহৃত মেয়েকে ফিরে না পেয়ে মায়ের উৎকন্ঠা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

১৩ বছরের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরী আড়াই মাস ধরে অপহৃত হয়েছে। এরই মাঝে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করেছিল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিধায় আদালতের আদেশে তাকে তার মায়ের জিম্মায় বুঝিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। মা অভিযোগ করেছেন আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে মামলাটির আসামিরা তার মেয়েকে ফের জোরপূর্বক অপহরণ করেছে। মা জানেন না তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে কিনা, কিংবা তাকে কোথায় কি অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

ঘটনাটি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের দেউলাবাড়ী এলাকার। অপহৃত কিশোরীর মা ২ জুন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তার মেয়েকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে পুলিশ দাবি করেছে ওই কিশোরীই তার মায়ের কাছে যেতে চায় না।

সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত কিশোরীর মা অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিবেশী মো. হযরত আলী শেখের ছেলে মো. সোহেল রানা (২০) তার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করার জন্য উত্যক্ত করতো। গত ১৬ মার্চ বিকেলে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোহেল রানা তার সহযোগীদের নিয়ে তার মেয়েকে অপহরণ করে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে অপহণের তিনদিন পর ১৯ মার্চ তিনি বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধিত ২০০৩) ৭/৩০ ধারায় মেলান্দহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মেলান্দহ উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের দেউলাবাড়ী গ্রামের মো. হযরত আলী শেখের ছেলে মো. সোহেল রানা, তার বাবা মো. হযরত আলী শেখ, মৃত ছাহু শেখের ছেলে মো. নিমু শেখ, নটারকুড়া গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. মমিন ও মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মো. খায়রুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী সিঙ্গাপুর প্রবাসী। মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আমার মেয়েকে উদ্ধার করে গত ৩০ এপ্রিল আদালতে হাজির করলে আদালত মেয়েকে আমার জিম্মায় থাকার আদেশ দেন। ওইদিন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে মেলান্দহে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা আমার মেয়েকে আবার জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আমার মেয়ে নাবালিকা। তার বিয়ের বয়স হয়নি। আমার মেয়েকে তারা কোথায় কিভাবে রাখছে তা আমি জানি না। তারা আমার মেয়েকে আমার সাথে কোনো যোগাযোগও করতে দেয় না। একদিকে আমার মেয়ের এই অবস্থা নিয়ে দু:শ্চিন্তা, অন্যদিকে আসামিদের হুমকির মুখে আমার আরেক কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।’

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মেলান্দহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজাহারুল ইসলাম ২ জুন রাতে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘মামলাটির প্রথম ধাপে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করে দেই। সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিধায় আদালত তাকে তার মায়ের জিম্মায় রাখার আদেশ দিলে তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। মেয়ের মায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। আদালতের আদেশের পর কিশোরী নিজেই ছেলের (সোহেল রানার) বাড়িতে চলে গেছে। সে আসলে ছেলেটিকেসহ তার মায়ের কাছে যেতে চায়। তা না হলে সে আত্মহত্যা করবে বলে আমাকে জানিয়েছে। এখন আর আমাদের করার কিছুই নেই। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। এখন হাতে কাজ শুধু মামলাটির চার্জশিট প্রদান করা।’