থানায় জিডি করলেন জামালপুরের ৩১ সাংবাদিক

জিডি গ্রহণ করেন জামালপুর সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় নির্যাতনের শিকার কালের কণ্ঠের জামালপুর প্রতিনিধি ও বাংলারচিঠিডটকমের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু এবং এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ৩১ জন সাংবাদিক তাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ১ জুন রাতে জামালপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জামালপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক এটিএন বাংলার সাংবাদিক লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে ৩১ জন সাংবাদিক একযোগে ১ জুন রাত সাড়ে ১০টায় জামালপুর সদর থানায় হাজির হন। তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামানের কাছে তাদের পৃথক পৃথক জিডির কপি জমা দেন। ওসি তাৎক্ষণিক জিডি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

সাংবাদিকরা তাদের জিডিতে অভিযোগ করে বলেছেন, গত ২৮ মে দুপুরে জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে জমির দলিল নিবন্ধনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দলিল লেখক মো. হাবিবুর রহমানের চেম্বারে কথা বলার সময় সাংবাদিক মোস্তফা মনজুর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে জামালপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক মোস্তফা মনজু বাদী হয়ে তার ওপর হামলার মূলহোতা স্ট্যাম্পভেন্ডার ও জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনুসহ নয়জনকে আসামি করে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দু’দিনের মাথায় মামলাটির আসামিরা ৩০ মে আদালত থেকে জামিন নিয়ে সাংবাদিক মোস্তফা মনজুসহ আন্দোলনতরত জামালপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকনেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সকল সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ধরনের হুমকিতে সাংবাদিক মোস্তফা মনজুসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, মোস্তফা মনজুর ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে তিনিসহ আন্দোলনরত সাংবাদিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই থানায় গণজিডি দায়ের করে সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। একই সাথে হুমকিদাতা হাসানুজ্জামান খান রুনু ও তার সহযোগীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছি। অন্যথায় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বৃহত্তর সমাবেশসহ আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।’

জামালপুর প্রেসক্লাবের দুই সাংবাদিকনেতা ছাড়া অন্যান্য সাংবাদিক যারা জিডি করেছেন তারা হলেন- মোস্তফা মনজু, মোস্তফা বাবুল, আজিজুর রহমান ডল, জাহাঙ্গীর সেলিম, দুলাল হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল আজিজ, সুজিত রায়, আনোয়ার হোসেন মিন্টু, আনোয়ার হোসেন মুক্তা, আনোয়ার হোসেন, কাফি পারভেজ, আজিজুর রহমান চৌধুরী, সাঈদ পারভেজ তুহীন, শেলু আকন্দ, সৈয়দ শওকত জামান, মেজবাহ উদ্দিন শাকিল, মেহেদি হাসান, আরিফুজ্জামান আকন্দ, জ্যোতিশ চন্দ্র এষ, জাহিদ আনোয়ার জাকির, মনজুরুল হক, তৌফিকুল আলম শরীফ, শহীদুল ইসলাম তুফান, এসএম হোসাইন আছাদ, সাইমুম সাব্বির শোভন, মাহমুদুল হাসান মুক্তা, রুহুল আমিন রাজু ও মো. জুলফিকার আলী।

প্রসঙ্গত, পেশাগত দায়িত্বপালন কালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জামালপুর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩০ মে জামালপুর শহরের দয়াময়ী মোড়ে সর্বস্তরের সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ মানববন্ধন এবং পরের দিন ৩১ মে সকালে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সাথে মামলাটির সকল আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে সাংবাদিক মোস্তফা মনজুসহ আন্দোলনরত সকল সাংবাদিকদের হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছেন।