বিনা মরিচ-১ এ নতুন আশা

নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাসরিন আক্তারের রোপণ করা বিনা মরিচ-১। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বিনা’র বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বিনা মরিচ-১ নামে উচ্চফলনশীল ও অপেক্ষাকৃত কম ঝালের এ মরিচে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিনা’র কৃষিবিজ্ঞানীরা ২০১৬ সালে অধিক ফলনশীল ও তুলনামূলক কম ঝালের বিনা মরিচ-১ জাত উদ্ভাবন করেছেন।

এ মরিচ মসলা হিসেবে তো বটেই, ঝাল কম হওয়ায় একই সঙ্গে সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। বিনা মরিচ-১ জাতের গাছ খর্বাকৃতি। পূর্ণ বয়স্ক গাছ ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। তবে মরিচের আকার বেশ বড় ও মোটা। ফলে এই বিনা মরিচ-১ যে কারো নজর কাড়তে স্বক্ষম। গাছ লাগনোর ৩০ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল-ফল আসা শুরু হয় এবং দীর্ঘদিন ফলন দেয়। প্রতিটি গাছে প্রতিবারে ২৫ থেকে ৩৫টি মরিচ ধরে এবং প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ বার ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব। সঠিক পরিচর্যায় এই মরিচের উৎপাদন অন্য যে কোনো দেশীয় ও প্রচলিত জাতের মরিচের তুলনায় ১৩০% থেকে ১৪০% ফলন বেশি হয়। ফলে প্রতি হেক্টরে ২৫ টন থেকে ৩৫ টন বিনা মরিচ-১ ফলানো সম্ভব, যা অন্য কোনো মরিচের ক্ষেত্রে কল্পনাতীত বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ও বিনা’র কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বিনা’র বৈজ্ঞানিকগণ নিরলস পরিশ্রম ও প্রচেষ্ঠার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাতের ধান, পাট, ডাল, সরিষা, বাদাম, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের একাধিক জাত উদ্ভাবন করছেন। তবে উচ্চফলনশীল বিনা মরিচ-১ নামের এই জাতের মরিচের উদ্ভাবনটি স্বাভাবিক কারণেই অধিক গুরুত পাচ্ছে। এ উদ্ভাবনটি অন্য ফসলের জাতের উদ্ভাবনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই মরিচের ফলন, আকার, কার্যকারীতা ও উৎপাদনের সফলতা কৃষকদের মাঝে দ্রুত প্রভাব ফেলেছে।

বিভিন্ন তথ্য মতে, বিনা’র বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম ২০১২ সালে চীনের একটি স্থানীয় মরিচের জাত থেকে বীজ সংগ্রহ করে ভিয়েনা ও অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন মাত্রায় রেডিয়েশন প্রয়োগ করে দীর্ঘ চার বছর গবেষণায় এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এই জাতটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে দেশের বিভন্ন অঞ্চলে শীত মৌসুমে উদ্ভাবিত জাতের বিনা মরিচ-১ চাষ করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জিত হয়। বিভিন্ন সফলতা বিবেচনায় ও ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বাংলাদেশ বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বিনা মরিচ-১ শীতকালীন ও উচ্চফলনশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্যে নিবন্ধিত হয়।

এ বছর শেরপুরের নকলা উপজেলার পাঠাকাটা এলাকায় এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বিনা উপকেন্দ্রে বিনা মরিচ-১ চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। এই সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষকরা এই মরিচ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাসরিন আক্তার জানান, উপকেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে বিনা মরিচ-১ চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। এর উৎপাদন দেখে স্থানীয় কৃষকরা অন্য মরিচের পরিবর্তে এই মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। সঠিক পরিচর্যায় এই মরিচের উৎপাদন অন্য যে কোনো দেশীয় ও প্রচলিত জাতের মরিচের তুলনায় ১৩০% থেকে ১৪০% ফলন বেশি হয়। ফলে প্রতি হেক্টরে ২৫ টন থেকে ৩৫ টন বিনা মরিচ-১ ফলানো সম্ভব, যা অন্য কোনো মরিচের ক্ষেত্রে অসম্ভব।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, কৃষকরা এই বিনা মরিচ-১ চাষে যে পরিমাণ লাভ পাবেন তা অন্য কোনো আবাদে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই এই মরিচ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে এই মরিচ চাষে জমির পরিমাণ ও চাষীর সংখ্যা উভই বাড়বে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।