দেওয়ানগঞ্জে দুটি স্কুল যমুনার ভাঙনের হুমকিতে

যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এম ইউ শাকিল, নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয় ও খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ইতোমধ্যে খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক তলা বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন এবং খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়ের আধা পাকা একটি ভবন ও বিদ্যালয়ের পাশে স্থাপিত আধা পাকা একটি মসজিদ, খোলাবাড়ীর চর ও আশপাশ গ্রামের অন্তত ১০০ বসতভিটা এবং প্রায় দুই কিলোমিটার পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় নদী ভাঙন রোধে কার্যকর টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি আধা পাকা ভবনের অর্ধেক ভাঙা, টিনের চাল খুলে গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠে খুঁটি এবং কিছু অংশে টিনের চাল দিয়ে কোনো রকমে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। মাটির ওপর বিছানো হয়েছে প্লাস্টিকের পলিথিন এবং বেড়া দেওয়া হয়েছে টিন আর বাঁশ দিয়ে। ৬ এপ্রিল দুপুরে ‘আমাদের দাবি একটাই- নদী ভাঙন রোধ চাই’ এই স্লোগানে খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয় ও খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা করেছে। এ সময় তারা খোলাবাড়ী এলাকায় নবনির্মিত বাহাদুরাবাদ নৌ থানার ভবন উদ্বোধনে আগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের কাছে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ- শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ‘দাবি মোদের একটাই নদী ভাঙন রোধ চাই’ ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’ সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়েছে।

খোলাবাড়ীর চর গ্রামের ব্যবসায়ী জোবায়ের সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, নদী ভাঙন চলাকালে সরেজমিন এ বিদ্যালয়ে আসেন এবং নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের চিত্র দেখা যায়নি। এখন যমুনার পানি কমে গেছে তাই ভাঙন দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনে বর্ষা মওসুমে পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙন শুরু হবে। এর আগেই যদি নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়, খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন, খোলাবাড়ী বাজার ও আশপাশের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও আমিনা এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লায়লা ও আল মামুন জানান, তাদের বিদ্যালয়ের ভবন নদী গর্ভে বিলীন হলে তারা ক্লাস করবে কোথায়।

খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। যমুনা নদী গর্ভে এ বিদ্যালয়ের একটি ভবন বিলীন হয়ে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমরা নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলাম। নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম কাউসার বলেন, এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে মাত্র দুইটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। খোলাবাড়ীর চর উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে এ বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন নির্মিত হয়েছিল। কয়েক মাস আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ওই ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন বলেন, যমুনা নদীর ভাঙন রোধে পাইলিং নির্মিত হলে আমার ইউনিয়নের বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া মন্ডল বাজার এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে রাস্তা ভেঙে গেলে এ ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, ওই এলাকায় নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প তৈরি করার কথা। এ সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানতে পারবেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে।