পপুলার ক্লিনিকে অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, ক্লিনিককর্মীকে গণধোলাই

পপুলার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত নবজাতক শিশুটি তার এক স্বজনের কোলে। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর॥
জামালপুরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। প্রসূতির বিক্ষুব্ধ স্বজনদের রোষাণলে পড়ে ওই হাসপাতালের এক কর্মী গণধোলাই খেয়েছেন। ২৬ আগস্ট ভোর সাড়ে চারটা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত জামালপুর শহরের নয়াপাড়া এলাকায় জামালপুর পপুলার হাসপাতাল (প্রা:) নামের ওই ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ক্লিনিকটির মালিক ও ম্যানেজারসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। পরে জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির উদ্যোগে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও প্রসূতীর স্বজনদের সাথে এক বৈঠকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ ঘটনার মীমাংসা করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অভিযোগে জানা গেছে, জেলার মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের ফুলকোচা গ্রামের ইসমাইল হোসেন আনন্দ তার অন্ত:স্বত্বা স্ত্রী দোলনা বেগম সুখীকে (২৪) ২৬ আগস্ট ভোর সাড়ে চারটার দিকে জামালপুর শহরের নয়াপাড়া এলাকায় পপুলার ক্লিনিকে ভর্তি করান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের জন্য। ভোরে ক্লিনিকটির ম্যানেজার বা মালিক পক্ষের দায়িত্বশীল কেউ ছিলেন না। কর্তব্যরত প্যাথলজিস্ট আমিনুর রহমান, নার্স মৌসুমী ও রিতু প্রসূতীকে ভর্তি করেন। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করলে প্রসূতীর স্বামী আনন্দ ১ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করতে বলেন। এ সময় প্যাথলজিস্ট আমিনুর রহমান ও নার্সরা প্রসূতীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। তারা প্রসূতীর রক্তও নেন।

প্রথমে তারা স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করেন। প্রায় দেড় ঘন্টা পর ভোর ছয়টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে তারা প্রসূতীর স্বজনদের জানায় ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি। এ সময় প্রসূতীর স্বজনদের সন্দেহ হলে অন্য ক্লিনিকে যেতে চাইলে প্যাথলজিস্ট আমিনুর রহমান ও এক্স-রে অপারেটর আরিফ রোগী নিয়ে যেতে হলে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে প্রসূতী কি অবস্থায় আছে তাও জানতে দেওয়া হয়নি তাদেরকে।

একপর্যায়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক প্রসূতী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. শফিকুল ইসলাম একজন এনেসথেসিয়া ডাক্তারকে সাথে নিয়ে প্রসূতীর অস্ত্রোপচার করলে মৃত মেয়ে বাচ্চা প্রসব হয়। এ নিয়ে প্রসূতির স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। তারা অভিযোগ তুলেন, ডাক্তার ক্লিনিকে আসার আগেই স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করলে পেটেই নবজাতক মারা গেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ক্লিনিকে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ভোরে কর্তব্যরত প্যাথলজিস্ট আমিনুর রহমান ও এক্স-রে অপারেটরসহ ক্লিনিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গা ঢাকা দেন।

এদিকে ভোরে কর্তব্যরত এক্স-রে অপারেটর আরিফ বেলা দেড়টার দিকে ক্লিনিকে ফিরে এলে প্রসূতীর লোকজনরা তাকে চিনতে পেরে তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বেলা দুটার দিকে জামালপুর জেলা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গনোস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বুলবুল পপুলার ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এবং প্রসূতির স্বজনদের সাথে বৈঠক করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রসূতির স্বামী আনন্দকে ম্যানেজ করে ঘটনার মীমাংসা করেন। ওই বৈঠকের পর গুরুতর অসুস্থ প্রসূতী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকলেও প্রসূতীর স্বজনরা মৃত নবজাতককে নিয়ে ক্লিনিক ত্যাগ করেছেন।

জামালপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব নিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রসূতীর স্বজনরা থানায় অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রসূতীর স্বজনরা কেউ থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’