জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাল ডাকবাক্সগুলো আজ নিস্তব্ধ, ভেতরে নেই কোন চিঠি। একসময় মানুষের যোগাযোগের প্রধান ভরসা ছিল ডাক বিভাগ। ডাকপিয়নের ঘণ্টাধ্বনি ছিল মানুষের তথ্য আদান-প্রদানের নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু সময়ের পালাবদলে প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে গেছে সেই চিঠির দিন।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে ডাকবাক্সে জমা পড়ে না কোন চিঠি। চিঠির জন্য অপেক্ষা, ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি কিংবা ডাকঘরের কর্মচাঞ্চল্য সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি।
আজ ৯ অক্টোবর, বিশ্ব ডাক দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জনগণের জন্য ডাক : স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর।’ যার উদ্দেশ্য জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযোগ বৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়নে ডাক সেবার ভূমিকা তুলে ধরা এবং আধুনিক ডাক ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডে ২২ দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গঠিত হয় ‘ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন’ (ইউপিইউ)। ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস ঘোষণা করা হয়। দিবসটি স্মরণ করিয়ে দেয় ডাক বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল অতীত।

মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পোস্ট অফিসের সামনে রাখা লাল ডাকবাক্সগুলো যেন নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় প্রবাসে থাকা সন্তানের খোঁজ, প্রিয়জনের ভালবাসা কিংবা অভিমানের চিঠিতে ভরে উঠত এই লাল বাক্স। ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি হয়ে ওঠেছিল সুখ-দুঃখের দূত, অপেক্ষমাণ হৃদয়ের সান্ত্বনা।
জানা গেছে, একসময় ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠিপত্র, মানি অর্ডার ও অন্যান্য সরকারি নথি আদান-প্রদানের ব্যস্ততা থাকলেও এখন দিনভর খালি পড়ে থাকে ডাকঘরের ডেস্ক। ডাকপিয়নেরা নিয়মিত অফিসে হাজিরা দিলেও হাতে কাজ নেই বললেই চলে। বর্তমানে ডাক বিভাগ মূলত সরকারি দপ্তরের চিঠিপত্র, নোটিশ ও নথি সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এখন মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে মুহূর্তেই খবর পৌঁছে দেওয়া যায়। তাই আর ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার বা ডাকপিয়নের অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে সরকারি খরচে পরিচালিত ডাকঘরগুলো কার্যত অলস সময় কাটাচ্ছে।
জোড়খালী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রফিক উদ্দিন বলেন, একসময় ডাকবাক্সগুলো ভরে উঠত চিঠিতে। ডাকপিয়নের ঘণ্টা বাজলেই মানুষ ছুটে আসত। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ডাকপিয়ন বাড়িতে বাড়িতে চিঠি পৌঁছে দিতেন। সেই দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।
বালিজুড়ী সাব-পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মো. মকবুল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে ডাক ব্যবস্থার গতি কিছুটা কমেছে। তবে ডাক বিভাগও এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বর্তমানে মোবাইল মানি অর্ডার, মানি অর্ডার, ডাকটিকিট ও স্ট্যাম্প বিক্রি কার্যক্রম চালু আছে। ডাকঘরে এখন আত্মীয়-স্বজনের ব্যক্তিগত চিঠি তেমন একটা না এলেও সরকারি নথিপত্র, নোটিশ ও বিভিন্ন চিঠিপত্র নিয়মিত আসে।