ভারতের কাছে নেদারল্যান্ডসের হারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :

ওয়ানডে বিশ্বকাপে লিগ পর্বের ৪৫ ও শেষ ম্যাচে ১২ নভেম্বর ভারতের কাছে ১৬০ রানে হেরেছে নেদারল্যান্ডস। ডাচদের লজ্জাজনক হারে ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।

নিয়মনুযায়ী, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে বিশ্বকাপে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ আটের মধ্যে থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, লিগ পর্বের সব খেলা শেষে ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থাকায় টেবিলের অষ্টমস্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করলো বাংলাদেশ (-১.০৮৭)। ৯ ম্যাচে ৪ করে পয়েন্ট আছে শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসেরও। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে নবমস্থানে শ্রীলংকা (-১.৪১৯) ও দশমস্থানে আছে নেদারল্যান্ডস (-১.৮২৫)।

শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরিতে লিগ পর্বে নিজেদের নবম ও শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪১০ রান করে স্বাগতিক ভারত। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া আইয়ার অপরাজিত ১২৮ ও রাহুল ৬৪ বলে ১০২ রান করেন। জবাবে ২৫০ রানে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। এই জয়ে ৯ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে সেমিফাইনাল খেলতে নামবে ভারত।

বেঙ্গালুরুতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে ভারত। ১২তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। ঐ ওভারেই ওয়ানডেতে ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন ৩০ বল খেলা গিল। হাফ-সেঞ্চুরির পরই ফন মিকেরেনের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার গিল। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩২ বলে ৫১ রান করেন তিনি। রোহিতের সাথে ৭১ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন গিল। এ বছর এ্ নিয়ে সর্বোচ্চ পঞ্চমবারের মত জুটিতে শতরান করলেন রোহিত ও গিল।

১৪তম ওভারে ওয়ানডেতে ৫৫তম হাফ-সেঞ্চুরি পান রোহিত। ৪৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পর বিদায় নেন ভারত দলপতি। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৪ বলে ৬১ রান করেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে এক বছরে সর্বোচ্চ ও বিশ্বকাপের এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাকানোর বিশ্ব রেকর্ড গড়েন রোহিত। এছাড়া বিশ্বকাপের এক আসরে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের মালিক হলেন তিনি। ২০০৩ সালে ৪৬৫ রান করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এবার এখন পর্যন্ত ৫০৩ রান করেছেন রোহিত।

দলীয় ১২৯ রানে রোহিত ফেরার পর আইয়ারকে নিয়ে ৬৬ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি। রোহিত ও গিলের মত হাফ-সেঞ্চুরির করেন কোহলিও। ৭১তম হাফ-সেঞ্চুরি করতে ৫৩ বল খেলেন কোহলি। এতে এক আসরে সর্বোচ্চ ৭বার করে ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেলে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের রেকর্ড স্পর্শ করেন কোহলি। ২০০৩ সালে টেন্ডুলকার ও ২০১৯ সালে সাকিব, এমন কীর্তি গড়েছিলেন।

হাফ-সেঞ্চুরির পর ৫১ রানে থামেন কোহলি। ৫৬ বল খেলে ৫টি চার ও ১টি ছয় মারেন কোহলি। আইয়ারের সাথে ৭১ রানের জুটি ছিলো তার।

২৯তম ওভারে দলীয় ২শ রানে কোহলি ফেরার পর ক্রিজে আইয়ারের সঙ্গী হন রাহুল। উইকেটে সেট হয়ে আইয়ারের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা ঘুড়ান রাহুল। রোহিত-গিল ও কোহলির পর ৪৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান আইয়ার। এতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ভারত। এই প্রথমবার বিশ্বকাপের এক ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটারই ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেললেন।

৪২তম ওভারে এই ইনিংসে অর্ধশতক করেন রাহুলও। চতুর্থবারের মত ওয়ানডেতে এক ইনিংসে প্রথম পাঁচ ব্যাটারই ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেললেন। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দু’বার ও পকিস্তান-ভারত একবার করে এমন নজির গড়ে। ৪০ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পর নেদারল্যান্ডস বোলারদের উপর চড়াও হন রাহুল।

অন্যপ্রান্তে ৪৬তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ ও বিশ্ব কাপ মঞ্চে প্রথম শতক হাকান ৮৪ বল খেলা আইয়ার। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির ঘরে পা রাখেন রাহুল। ওয়ানডেতে সপ্তম সেঞ্চুরি করতে ৬২ বল খেলেন তিনি। বিশ্বকাপে ভারতের পক্ষে এটিই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ওভারের পঞ্চম বলে আউট হবার আগে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৪ বল খেলে ১০২ রান করেন রাহুল। বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের পর ভারতের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করলেন রাহল।

ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন আইয়ার। ৯৪ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন তিনি এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪১০ রানে বিরাট সংগ্রহ পায় ভারত। নিজেদের ওয়ানডেতে এই সপ্তমবার ইনিংসে ৪শর বেশি রান করলো টিম ইন্ডিয়া। এরমধ্যে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার। নিজেদের ওয়ানডেতে এটি চতুর্থ ও বিশ্বকাপ মঞ্চে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ভারতের।

নেদারল্যান্ডসের বাস ডি লিডে ৮২ রানে ২ উইকেট নেন। ডাচদের তিন বোলার বল হাতে ৮০এর বেশি রান দিয়েছেন। যা বিশ্বকাপে যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলংকার সর্বোচ্চ চার বোলারের এক ইনিংসে ৮০এর বেশি রান দেয়ার নজির হয়েছে।

৪১১ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ভারতীয় বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা। শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারের কেউই বড় ইনিংস খেলতে না পারলে ১৪৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। এদেওরমধ্যে সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন।

পরের দিকে হাফ-সেঞ্চুরিতে দলের হারের ব্যবধান কমান তেজা নিদামানুরু। সাত নম্বরে নেমে ৩৯ বলে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন তিনি। ৪৭ দশমিক ৫ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। ভারতের বুমরাহ-সিরাজ-কুলদীপ-জাদেজা ২টি করে এবং কোহলি-রোহিত ১টি করে উইকেট নেন।

আগামী ১৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে খেলতে নামবে ভারত। পরের দিন কোলকাতায় দ্বিতীয় সেমিতে লড়বে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৪১০/৪, ৫০ ওভার (আইয়ার ১২৮*, রাহুল ১০২, লিডে ২/৮২)।
নেদারল্যান্ডস : ২৫০/১০, ৪৭.৫ ওভার (নিদামানুরু ৫৪, এঙ্গেলব্রেখট ৪৫, সিরাজ ২/২৯)।
ফল : ভারত ১৬০ রানে জয়ী।