কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শেরপুরে ফ্রিজ বিক্রির ধুম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেরপুরে জমে উঠেছে ফ্রিজ কেনাবেচা। জেলার পাঁচ উপজেলার শহরাঞ্চলের ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ফ্রিজ বিক্রির ধুম পড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির মাংস সংরক্ষণের জন্যই ফ্রিজ কিনছেন তারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ফ্রিজ বিক্রিতে তাদেরকে কোটি টাকার টার্গেট দিয়েছে। এ কারণে নানা আকারের ফ্রিজে তাদের রয়েছে মূল্যছাড় নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

শহরের ফ্রিজের দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন, ট্রান্সটেক, এলজি বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, স্যামসাং, প্যানাসনিক, মাই ওয়ান, যমুনা, কনকা ও মিনিস্টার। এছাড়াও আরও অনেক ব্যান্ডের ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে শহরের চকবাজার, তেরাবাজার, নিউ মার্কেট, খরমপুর, মুন্সিবাজার এবং রঘুনাথপুর এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন ফ্রিজের শোরুমগুলোতে ক্রেতাদের বেশ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শোরুমগুলোর ভেতরে এবং বাইরে রাখা হয়েছে অসংখ্য ফ্রিজ। বড় শোরুম থেকে শুরু করে ছোট ডিলাররাও যেন প্রস্তুতি নিয়ে আছেন ক্রেতাদের চাহিদার পর্যাপ্ত যোগান নিয়ে। ক্রেতার সাধ্যমতো বিভিন্ন মূল্যের ও আকর্ষণীয় ফ্রিজ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ওইসব শোরুমগুলোর ভেতরের অবস্থা বলে দেয় ঈদ বাজারের কেনাকাটায় ফ্রিজের চাহিদা।

ফ্রিজের বাজারগুলোতে বিভিন্ন মূল্যহ্রাসে ফ্রিজ কেনাবেচা হচ্ছে। সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ ষাট হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যে ফ্রিজ কেনাবেচা হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের চাহিদা ও সাধ্যমতো ফ্রিজ পৌঁছে দিতে সব কোম্পানিগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় ও সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।

তেরাবাজার এলাকার ওয়ালটন শোরুমের ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, এবারের ঈদে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ৪শ’ পিস ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট দিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ডিপসহ নানা মডেলের ২৭০ পিস ফ্রিজ বিক্রি করেছেন। ক্রেতা সমাগম খুব বেশী থাকায় আগামী দুই দিনের মধ্যে এই টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। এছাড়া ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শোরুম খোলা রাখছেন তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুর রহমান বলেন, ক্রেতাদের জন্য ফ্রিজ কেনায় নানা অফার রয়েছে। লাকি কুপনের মাধ্যমে ৫-১০০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়ে ক্রেতারা উপহার হিসাবে ফ্রিজ অথবা ১৮ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িও পেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, এবার তার শোরুমে এক কোটি টাকার ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট রয়েছে। এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতেও আরও কয়েক কোটি টাকার ফ্রিজ বিক্রির নির্দেশনা রয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে।

রঘুনাথপুর এলাকার সিঙ্গার শোরুমের ম্যানেজার শামসুদ্দিন বাদল বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে এবার তাকে এক কোটি ৪৭ লাখ ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট দিয়েছে। আর ফ্রিজের পরিমাণ দেওয়া হয়েছে ৪২০টি। ইতোমধ্যে ২৪০টি বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে টার্গেট পূরণ সম্ভব বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, গ্রাম থেকে আসা লোকজন এবার সবচেয়ে বেশী ফ্রিজ কিনছেন। তার এখানে লিটার হিসাবে ৩৬০, ৩৩৩, ২৬০, ২০৮, ২৩০, ২১১, ১১৫, ২৩৫ মডেলের নানা আকারের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া লাকি কুপনের মাধ্যমে ফ্রিজ ফ্রিতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।

বাটারফ্লাই শোরুমের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার দুইশ ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট রয়েছে। ইতোমধ্যে টার্গেট পূরণ প্রায় হয়ে গেছে। তার শোরুমে সর্বনি¤œ একত্রিশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ ষাট হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে। আর ফ্রস্ট (বরফ যেটাতে বেশী জমে) আইটেমের ফ্রিজ বেশী বিক্রি হচ্ছে।

ভিশন এমপোরিয়ামের ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন বলেন, তারা ফ্রিজের কাক্সিক্ষত ক্রেতা পাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতা সমাগম বেশী হয়। ঢাকাতে কর্মরত শেরপুরের লোকজন এলাকায় ফিরলে বিক্রি আরো বেড়ে যাবে বলে তিনি জানান।

ফ্রিজ কিনতে আসা সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়নের পাঞ্জর ভাঙা গ্রামের ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, গরমে পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় বন্তুর মধ্যে ফ্রিজ অন্যতম। ফ্রিজ থাকলে খাবার দীর্ঘসময়ের জন্য টাটকা রাখা যায়। কুরবানি ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ছাড় দেয় কোম্পানিগুলো। এই সুযোগে ফ্রিজ কিনতে আসা।

আরেক ক্রেতা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বাসায় ফ্রিজ আছে। কুরবানির ঈদের গোশত রাখার জন্য ডিপ ফ্রিজের দরকার ছিল। সে অনুযায়ী কিনতে আসা।

ফ্রিজ ক্রেতা ঝিনাইগাতীর হলদি গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে তিনি মনের মতো ফ্রিজ পেয়েছেন। প্রায় প্রতিটি দোকানেই তিনি ভীর দেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ফ্রিজ কেনার ধুম পড়েছে।