হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার লোকসংস্কৃতি পুতুলনাচ

ইসলামপুরের সরদার পাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হল গ্রামীণ ঐতিহ্য পুতুলনাচ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যাঁতাকলে পড়ে, ঘরে ঘরে বোকা বাক্স ও অত্যাধুনিক মোবাইল সহজেই হাতের নাগালে আসায় আমাদের গ্রামবাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার একদা প্রাচীন লোকসংস্কৃতির বিনোদন মাধ্যমগুলোর একটি ‘পুতুলনাচ’ এক সময় লোক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন মেলা, উৎসবে বসত এই পুতুল নাচ। তবে আজ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের জগতে লুপ্ত হতে বসেছে বাংলার এই লোকসংস্কৃতি। অভাবের তাড়নায় বহু শিল্পী ছেড়ে দিয়েছেন, গ্রাম বাংলার মনোরঞ্জনের এই প্রধান উৎস পুতুলনাচ।

কবির কবিতায় কলমে ফুটে উঠত পুতুলনাচের ইতিকথা। যদিও তা আজ ইতিহাসে পরিণত হতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য পুতুলনাচের সংস্কৃতি ধরে রাখতে জামালপুরের ইসলামপুর সরদার পাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হল গ্রামীণ ঐতিহ্য পুতুলনাচ।

আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কচিকাঁচারা যখন মোবাইলের ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ইউটিউব খুলে সময় কাটাচ্ছে, মনের বিকাশ যেমন প্রতিহত হচ্ছে, শিশুমন মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। ফলে, মানসিক ও শারীরিক জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মন। ঠিক এসময় হারিয়ে যাওয়া পুতুলনাচের আসরে শৈশব কিশোর মনের বিকাশ ঘটানোর মূল লক্ষ্যে দেখা গেল মেলা প্রাঙ্গণে।

গ্রাম্য মেলা আর গ্রাম্য মেলা মানেই পুতুলনাচ। গানের তালে তালে ঐতিহ্যবাহী ঘটনার সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র ও সুরের মূর্ছনায় পুতুলের নৃত্য। এই পুতুলনাচ দেখতে গ্রামবাংলার কচিকাঁচারা ভিড় জমিয়েছে।

শিল্পীরা বলেন, এখন এই শিল্পের সঙ্গে কেউ আসতে চাইছে না। অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মোবাইলের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে মানুষ, যত সময় যাচ্ছে ততই গ্রাম বাংলার এই শিল্প সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আমাদের সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন।

পুতুল নাচ শিল্পী রাখাল বসাক জানান, পুতুল নাচ ছিল আমার পেশা, এখন আগের বিনোদন আনন্দ ফুর্তি নাই। তাই এসব ছেড়ে দিয়েছি। যদি থাকতো তাহলে দিনপাত আমাদের ভাল চলতো। টাকা পয়সাও থাকতো। আজ পেশাটি নাই বিধায় কষ্টে দিনযাপন করছি।

মালিক বাঁধন জানান, পুতুলনাচের বিনোদন বিলুপ্তির পথে। আমার এ পুতুলনাচ চালিয়ে চার পাঁচটি পরিবারের সংসার চলে। সরকার যদি আমাদের দিকে নজর দিতো, আমাদের এ পেশার মানুষদের সন্তান নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে।

এই পুতুলনাচ দেখতে এসে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেকদিন পরে পুতুল নাচ দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছি, আজ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পুতুল নাচ দেখে খুব ভাল লাগলো।

অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক আখন্দ বলেন, আমরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে বসেছি, এসব যদি থাকতো তাহলে যুব সমাজ অন্যদিকে ধাবিত কম হতো। আমাদের সকলের এই ঐতিহ্য বিনোদন ধরে রাখা দরকার। তাহলে সমাজ উপকৃত হবে।