মেয়েকে জবাই করে হত্যা, সন্ধান মিলছে না মায়ের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মা-মেয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঁশঝাড়ের নিচে মেয়ের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। নিহত ওই নারীর নাম কাজলী আক্তার (৩০)। তাকে জবাই করে হত্যা এবং তার মা জোসনা বেগম (৫০) নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের মোনাকুর্শা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সদর থানা পুলিশ কাজলীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।

নিহত কাজলীর বাবা জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনা নয়াপাড়া এলাকার বাদাম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বাংলারচিঠিডটকমের এ প্রতিবেদককে জানান, কাজলি কামিল পাস। জেলার বকশীগঞ্জে একটি মাদরাসায় কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি তালাকপ্রাপ্তা। প্রথম স্বামী তাকে তালাক দিলে এলাকায় পুনরায় বিয়ে হয় তার। সেই স্বামীও তাকে তালাক দেন। তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাবার বাড়িতেই থাকতেন কাজলী। সদরের বাঁশচড়া ইউনিয়নের জামিরা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন কাজলী।

কাজলীর বাবা অভিযোগ করে আরও বলেন, বাঁশচড়া ইউনিয়নের জামিরা এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নিপুন চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কাজলীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চায়। তাকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চাকরি পাওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর কাজলী তার মা জোসনা বেগমকে সাথে নিয়ে নিপুনদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারা নিপুনের জন্য এক প্যাকেট মিষ্টিও নিয়ে যান। কিন্তু সারারাত তারা আর বাড়িতে ফিরে যাননি। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মোনাকুর্শা গ্রামের একটি নির্জন বাঁশঝাড়ের নিচে কাজলীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে মোস্তফা কামাল সেটি তার মেয়ে কাজলীর লাশ বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু কাজলীর মা জোসনা বেগমের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ে হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং স্ত্রীর সন্ধান চান শোকার্ত বাদাম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং স্ত্রী নিখোঁজ থাকার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন কাজলীর বাবা। এ ঘটনার পর থেকে নিপুন বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।

এদিকে খবর পেয়ে ৪ সেপ্টেম্বর সকালে সদর থানা পুলিশ নিহত কাজলীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত কাজলীর লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সুরতহালে কাজলীকে গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা তাকে জবাই করে হত্যা করেছে বলে তার স্বজন ও পুলিশ ধারণা করছে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. শাহনেওয়াজ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত কাজলীর লাশ তার স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে জবাই করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ না পেলেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও একজন নিখোঁজ থাকার ঘটনাটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ পেলে মামলা দায়ের করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।