বকশীগঞ্জে কৃষিতে সমৃদ্ধি অর্জন, অর্থকরী ফসলে ঝুঁকছেন কৃষক!

বকশীগঞ্জে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় চলতি মওসুমে অর্থকরী ফসল চাষ করা হয়েছে। ছবিটি সদর ইউনিয়নের সূর্যনগর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় বদলে যেতে শুরু করেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। কৃষির উন্নতির মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে বকশীগঞ্জ। কৃষির মাধ্যমেই অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা আগের চেয়ে লাভজনক ফসল উৎপাদন ও অর্থকরী ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আর এতে করেই পাল্টে যাচ্ছে অর্থনীতির গতি প্রকৃতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলাটি নানা রকম বৈচিত্রের একটি উপজেলা। এই উপজেলায় নদী-নালা, খাল, বিল ও চর রয়েছে। বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, মার্কেটিংয়ের অভাবসহ নানা কারণে এই উপজেলায় কৃষিতে ৫ বছর আগেও অনেক পিছিয়ে থাকলেও একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভর করেই বদলে যেতে শুরু করেছে এই উপজেলার মানুষের ভাগ্য।

এই পরিবর্তনের জন্য অসামান্য অবদান রয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের। তাদের কৌশল, কাজের বাস্তবায়ন ও কৃষকের সাথে নিবীড় সম্পর্কের কারণেই কৃষকরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

কৃষি প্রধান বকশীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর, নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগই চর এলাকা। বাকি বকশীগঞ্জ সদর, বাট্টাজোড় ও ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নটি কৃষি উপযোগী হলেও ভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কৃষকরা উন্নতির দিকে হাঁটছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও নিয়মিত যোগাযোগের কারণে সমৃদ্ধি অর্জন করেছেন এই উপজেলার কৃষকরা।

বকশীগঞ্জে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় চলতি মওসুমে অর্থকরী ফসল চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে সরিষার চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শের কারণে চলতি মওসুমে রেকর্ড সংখ্যক জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভ করা যায় সরিষা চাষে। পাশাপাশি রোপা আমন চাষের পর বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করা যায় বলে এবার ২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের চেয়ে ৬শ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার চাষের পর আবার ওই জমিতেই বোরো চাষ করা হবে।

এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাঁসির ঝিলিক ফুটেছে।

উচ্চ লাভজনক হিসেবে ভুট্টা চাষও করা হয়েছে চাহিদার চেয়ে বেশি জমিতে। বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মন ভুট্টার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। স্বল্প খরচে, অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হয় এই ফসলে। ফলে গত মওসুমের চেয়ে ভুট্টা চাষেও আরো অগ্রগতি হয়েছে এই উপজেলার কৃষকের। বেশি জমির মালিক ও অল্প জমির মালিকরাও ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা চাষে। সাধুরপাড়া, বগারচর, মেরুরচর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এই তিনটি ইউনিয়নের চর জুড়ে রয়েছে ভুট্টা চাষ। ভুট্টার পাতা গবাদিপশুর জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে গবাদি পশু পালনেও ভূমিকা রাখছে ভুট্টার চাষ।

এদিকে এবার কাঁচা সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। শীতকালীন সবজি চাষ পাল্টে দিয়েছেন চরের মানুষকে।

ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, আলু, বেগুন, করলা, গাজর চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, উপসহকারী কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকির কারণে আগাম জাতের সবজি হওয়ায় অনেক লাভবান হয়েছেন এই এলকার সবজি চাষিরা।

বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সূর্যনগর পূর্ব পাড়া গ্রামের নারী চাষি মুসলিমা বেগম জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় আমি আগাম জাতের ফুলকপির চাষ করি। ২৫ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করতে তার ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে।

ইতোমধ্যে এই গ্রামকে মডেল গ্রাম ঘোষণা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নতি ঘটাতে এবং অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ জানান, কৃষিতে অপার সম্ভাবনাময় একটি উপজেলার নাম বকশীগঞ্জ। আগের চেয়ে এখানকার কৃষকরা অর্থকরী ফসল উৎপাদন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এই এলাকার মানুষের কৃষিতে সমৃদ্ধিশালী করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা কৃষককে কৃষির মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত করতে সব সময় পরামর্শ ও সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধা কৃষকের কাছে পৌছে দিয়ে তাঁদের পাশে রয়েছি।