অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তানকে থামিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ টুর্নামেন্টের টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে একমাত্র দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছিলো পাকিস্তান। আসরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা সেই পাকিস্তানকে সেমির মঞ্চে থামিয়ে দিলো অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথু ওয়েড-মার্কাস স্টয়নিস ঝড়ে শেষ হয়ে গেল পাকিস্তানের জয় রথ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ১১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান।

স্টয়নিস-ওয়েডের ব্যাটিং তান্ডব ছাড়াখার হলো পাকিস্তানের স্বপ্ন। পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে এক পর্যায়ে ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ৪১ বলে ৮১ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয়বারের মত সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ফাইনালে তোলেন স্টোয়িনিস ও ওয়েড।

দুবাইয়ে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতে দলকে আরও একবার উড়ন্ত সূচনা এনে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। ১০ ওভারে ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা।

পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৪৭ রান সংগ্রহ করেন রিজওয়ান ও বাবর। পাওয়ার-প্লেতে শুন্য ও ২০ রানে দু’বার জীবন পান রিজওয়ান। বাবরকে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে আউট করেন অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার এডাম জাম্পা। ৩৪ বল খেলে ৫টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান বাবর।

বাবরের আউটের পর ক্রিজে রিজওয়ানের সঙ্গী হন ফখর জামান। রানের চাকা সচলই রাখেন রিজওয়ান ও জামান। ১০ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে ৪৬ রান যোগ করেন তারা। এসময় ৪১ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়াারের ১১তম ও এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন রিজওয়ান।
জশ হ্যাজেলউডের করা ১৭তম ওভার থেকে ২১ রান তুলেন রিজওয়ান- জামান। রিজওয়ান ১টি করে চার ও ছক্কা ও জামান ১টি ছক্কা মারেন।

১৮তম ওভারে রিজওয়ানকে থামান অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক। ৫২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৭ রান করেন রিজওয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬ বলে ৭২ রান যোগ করেন রিজওয়ান-জামান। রিজওয়ান ওভারে ফিরলেও, ১৫ রান পায় পাকিস্তান। ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে পাকিস্তানের হার্ড-হিটার আসিফ আলিকে তুলে নেন প্যাট কামিন্স। গত ম্যাচে ঝড় তোলা আসিফ আজ ফিরেছেন খালি হাতে ।

তবে স্টার্কের করা শেষ ওভারে ২টি ছক্কায় ১৫ রান তুলে পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দেন জামান। শেষ পর্যন্ত২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। আসরে প্রথম পাঁচ ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ জামান অনবদ্য ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার ৩২ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৭৭ রানের জবাবে প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। অসি অধিনায়ককে শুন্য হাতে ফেরান পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি।

এরপর ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে শুরুর ধাক্কা থেকে টেনে তুলেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। এই জুটি ভেঙ্গে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার শাদাব খান। ২২ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ রান করেন মার্শ।

মার্শকে শিকারের পর অস্ট্রেলিয়ার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন শাদাব। দলের দুই সেরা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথকে ৫ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ৭ রানে আউট করেন শাদাব। এর মাঝে ওয়ার্নারের আউট, অস্ট্রেলিয়াকে লড়াই থেকে ছিটকে ফেলে। শাদাবের বলে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওয়ার্নার। পাকিস্তানের আবেদনে ওয়ার্নারকে আউট দেন আম্পায়ার। সেটি মেনে নিয়ে নামের পাশে ৪৯ রান রেখে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ওয়ার্নার। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল ওয়ার্নারের ব্যাট স্পর্শ করেনি। ওয়ার্নারও রিভিউ নেননি। এ সময় ১২ দশমিক ২ ওভারে ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এমন অবস্থায় শেষ ৪৬ বলে ৮১ রানের প্রয়োজন পড়ে অস্ট্রেলিয়ার।

এ অবস্থায় দলকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব বর্তায় স্টয়িনিস ও ওয়েডের ওাপড়র। ঝুঁিক না নিয়ে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। তবে আস্কিং রেটের সাথে দৌঁড়াতে পারছিলেন না স্টয়িনিস ও ওয়েড। ফলে শেষ ৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার পড়ে ৫০ রান।

১৬তম ওভারে ১২, ১৭তম ওভারে ১৩, ১৮তম ওভারে ১৫ রান তুলে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন স্টোয়িনিস ও ওয়েড। এতে ফাইনালে উঠতে শেষ ২ ওভারে ২২ রানের দরকার পড়ে অস্ট্রেলিয়ার।

১৯তম ওভারে আক্রমনে আসেন পাকিস্তানের সেরা বোলার আফ্রিদি। প্রথম ৩ বলে ৪ রান দেন আফ্রিদি। তৃতীয় বলে ওয়েডের ক্যাচ ছাড়েন হাসান আলি। জীবন পেয়ে, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন ওয়েডে। পরের তিন বলে তিনটি ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলে দেন ওয়েড। ১ ওভার বাকী রেখে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান করে সেমির ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ষষ্ঠ উইকেটে ৪১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটি গড়েন স্টোয়িনিস ও ওয়েড।

৩১ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করেন ওয়েড। অন্যপ্রান্তে মাত্র ১৭ বলে অনবদ্য ৪১ রান করেন ওয়েড। তার ইনিংসে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েও পাকিস্তানকে হারের মুখ থেকে বাঁচাতে পারেননি শাদাব।

আগামী ১৪ নভেম্বর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান : ১৭৬/৪, ২০ ওভার (রিজওয়ান ৬৭, জামান ৫৫*, স্টার্ক ২/৩৮)।
অস্ট্রেলিয়া : ১৭৭/৫, ১৯ ওভার (ওয়ার্নার ৪৯, ওয়েড ৪১*, স্টোয়িনিস ৪০*, শাদাব ৪/২৬)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ম্যাথু ওয়েড (অস্ট্রেলিয়া)।