জামালপুর পিটিআইয়ে সিলিং ফ্যান মাথায় পড়ে গুরুতর আহত শিক্ষিকা হাসপাতালে

জামালপুর পিটিআইয়ের এই হলরুমেই ক্লাস চলাকালে সচল সিলিং ফ্যান মাথার ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষিকা শামীমা নাসরিন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

ক্লাস চলাকালে সিলিং ফ্যান মাথার ওপর পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন প্রশিক্ষণার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামীমা নাসরিন (৩৫)। তাকে জামালপুর ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে জামালপুরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (পিটিআই) ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত শামীমা নাসরিন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পলিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। দীর্ঘদিনের পুরনো সিলিং ফ্যানগুলো বদল না করায় মাঝে মধ্যেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। এ নিয়ে তাদের মাঝে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পিটিআই সূত্র জানায়, পিটিআইয়ের হলরুমে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম শিফটের ক্লাস চলাকালে ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে আকস্মিক একটি সিলিং ফ্যান প্রশিক্ষণার্থী শামীমা নাসরিনের মাথার ওপর পড়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার সময় অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা গুরুতর আহত শামীমা নাসরিনকে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একদিকে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, অন্যদিকে ফ্যান মাথার ওপর পড়ায় ভয়ে ওই শিক্ষিকা মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশিক্ষণার্থী একজন শিক্ষক ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে এ প্রতিবেদককে জানান, গুরুতর আহত শিক্ষিকা শামীমা নাসরিনের সিটিস্ক্যানসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। তাই তাকে সদর হাসপাতাল থেকে শহরের বেসরকারি শাহজামাল (রহ.) জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মাথার আঘাতের স্থান সিটিস্ক্যান করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সিটিস্ক্যান প্রতিবেদন পাওয়ার পর চিকিৎসকরা বলতে পারবেন যে তার পরবর্তী চিকিৎসার পদক্ষেপ কী হবে। মাথায় গুরুতর আঘাত পেলেও তার মাথা ফেটে যায়নি। সদর হাসপাতালে ভর্তির পর কয়েক ঘন্টা তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়। তিনি কথা বলতে পারছেন। তবে মানসিক ও শারীরিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে পিটিআইয়ের দুর্ঘটনাস্থল ওই ক্লাসে গিয়ে দেখা যায়, তখনও সেখানে ক্লাস চলছিল। এ সময় কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা মাথার ওপর সিলিং ফ্যান পড়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, তারা সবাই ভয় পেয়েছিলেন যে গুরুতর আহত শিক্ষিকা বাঁচবেন কিনা। তারা জানান, এ ঘটনাই প্রথম নয়, পিটিআইয়ের ওই ক্লাসসহ সকল ক্লাসের এবং মহিলা ও পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসিক হোস্টেলের সকল ফ্যান দীর্ঘদিনের পুরনো। মাঝে মধ্যেই চালু অবস্থায় ফ্যান খুলে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব সিলিং ফ্যানের অধিকাংশই ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে মেরামত করে করে চালানো হচ্ছে। এসব পুরনো সিলিং ফ্যান খুলে ফেলে নতুন সিলিং ফ্যান লাগিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযোগ করেন।

পিটিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহীদুল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্লাস চলাকালে মাথার ওপর সচল সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে গুরুতর আহত শিক্ষিকা শামীমা নাসরিনের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোসহ তার চিকিৎসার বিষয়ে আমিসহ বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা তার পাশে রয়েছেন। তার স্বজনরাও আছেন। আপাতত তার বড় ধরনের বিপদ কেটে গেছে বলে মনে করছি। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো হচ্ছে।

পুরাতন সিলিং ফ্যান প্রসঙ্গে মো. শহীদুল্লাহ বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরাতন সিলিং ফ্যানগুলো খুলে নতুন ফ্যান লাগানো হবে। একই সাথে যেসব ফ্যান ঠিক আছে কিন্তু ওয়্যারিং নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ওয়্যারিং পয়েন্টগুলো সরিয়ে নতুন করে ওয়েরিং করে ফ্যান লাগিয়ে দেওয়া হবে।