ভুড়িভোজ ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও বাল্যবিয়ে আটকে দিলেন ইউএনও

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের নকলায় ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। এ দিন বাল্যবিয়ের আইন অমান্য করায় বর ও কনের বাবাকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

২৫ জুলাই রাত ১১টার দিকে গোপন খবরের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও ইউএনও জাহিদুর রহমান উভয় পরিবারের অভিভাবককে ওই অর্থদণ্ড দেন।

উপজেলার নকলা ইউনিয়নের ছত্রকোনা এলাকায় কনের বাবার বাড়িতে ওই বিয়ের আয়োজন করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, নকলা ইউনিয়নের ছত্রকোনা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সাথে পার্শ্ববর্তী উরফা ইউনিয়নের লয়খা গ্রামের সাহের আলীর ছেলে খলিলুর রহমানের বিয়ে ঠিক হয়। সে অনুযায়ী ২৫ জুলাই রাতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। গোপনে এমন খবর পেয়ে ইউএনও কনের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। তবে ইউএনও যাওয়ার আগেই বরযাত্রীদের ভুড়িভোজসহ বিয়ের বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বর ও কনের বাবাকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না মর্মে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের কাছে মুচলেকা আদায় করা হয়।

আদালত পরিচালনাকালে নকলা পুলিশের বেশ কয়েকজন এসআই, এএসআই, কনস্টেবল, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহায়তা করেন।

স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী হাতেম আলী অভিযোগ করে বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কঠোর আইনী বাধা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ইউপি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে বর-কনের নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে এমন বিয়ের আয়োজন করা হয়। এমন ক্ষেত্রে নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজিদের কিছু করার থাকে না। কারণ তারা বর-কনের শিক্ষাগত সনদ অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে সে অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রার করেন।

ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপন আহমেদ বলেন, পদাধিকার বলে ইউপি চেয়ারম্যানগণ ইউনিয়ন বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটির সভাপতি। তাই বাল্যবিয়ে শতভাগ নিরোধ করতে হলে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের সতর্কতার সাথে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া প্রয়োজন। এর পরেও যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আশায় এমন সামাজিক অপরাধকে সহায়তা করেন, তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে নকলাকে প্রথম বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়ে কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবেনা। আইন অমান্য করলে এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অভিভাবক, বর, আয়োজক ও নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজিদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।