ড্র হলো বাংলাদেশ-শ্রীলংকার প্রথম টেস্ট

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ ব্যাটসম্যানদের রাজত্বের মধ্য দিয়ে ড্র’তেই শেষ হলো বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যকার দুই সিরিজের প্রথম টেস্ট।

নাজমুল হোসেন শান্তর ১৬৩ ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ১২৭ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ৫৪১ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে টাইগাররা। জবাবে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রানে ইনিংস ঘোষনা করে শ্রীলংকা। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ১০৭ রানের লিড পায় লংকানরা। এই ইনিংসে শ্রীলংকার পক্ষে অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ২৪৪ ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৬৬ রান করেন।

পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৩৩ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান করে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টির কারনে দিনের শেষ সেশনটিতে ম্যাচের ইতি টানেন ম্যাচ পরিচালনাকারীরা। ফলে ড্র’তে শেষ হয় ম্যাচটি।

চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৫১২ রান করেছিলো শ্রীলংকা। করুনারত্নে ২৩৪ ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে ধনাঞ্জয়াকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ২৯১ বলে ২২টি চারে ১৬৬ রান করেন ধনাঞ্জয়া। চতুর্থ উইকেটে ৫৫৩ বলে ৩৪৫ রানের জুটি গড়েন করুনারত্নে-ধনাঞ্জয়া।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে যেকোন উইকেট জুটিতে লংকার হয়ে সর্বোচ্চ রানের নয়া রেকর্ড গড়লেন করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া। ১৪ বছর পর নয়া রেকর্ড গড়লেন তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে শ্রীলংকার আগের সর্বোচ্চ রানের জুটিটি ছিলো ৩১১ রানের। ২০০৭ সালে ক্যান্ডিতে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩১১ রান করেছিলেন দুই সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।

ধনাঞ্জয়ার পর করুনারত্নেকেও শিকার করেন তাসকিন। ৪৩৭ বলে ২৬টি চারে ২৪৪ রান করেন শ্রীলংকার অধিনায়ক। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে এটিই করুনারত্নে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান।

দুই সেট ব্যাটসম্যানকে শিকারের পর শ্রীলংকার আরও ৩ উইকেটের পতন ঘটায় বাংলাদেশের বোলাররা। পাথুম নিশাঙ্কাকে ১২ রানে পেসার এবাদত হোসেন এবং হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ৪৩ রানে আউট করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৩১ রান করে রান আউট হন উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলা। সুরাঙ্গা লাকমল ২২ ও বিশ্ব ফার্নান্দো শুন্য রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান যান। এ সময় শ্রীলংকার রান ছিলো ৮ উইকেটে ৬৪৮ রান। দ্বিতীয় সেশন শুরুর আগে নিজেদের ইনিংস ঘোষনা করে লংকানরা।

তাই তৃতীয় সেশনের শুরু থেকে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। দলীয় ২১ রানে সাইফ হাসান ও ২৭ রানে নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন। দু’জনকে বিদায় দেন শ্রীলংকার পেসার সুরাঙ্গা লাকমল। সাইফ ১ ও শান্ত খালি হাতে ফিরেন। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করেছিলেন শান্ত।

সাইফ-শান্তর বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মোমিনুল হক। তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়ে চা-বিরতিতে যান তারা। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে আর মাঠে গড়ায়নি খেলা।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ৯৮ বল খেলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন তামিম। ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন মোমিনুল। শ্রীলংকার লাকমল ২টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন শ্রীলংকার করুনারত্নে।

আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে একই ভেন্যুতে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫৪১/৭ ডি, ১৭৩ ওভার (নাজমুল হোসেন শান্ত ১৬৩, মোমিনুল হক ১২৭, বিশ্ব ফার্নান্দো ৪/৯৬)।
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৫১২/৩, ১৪৯ ওভার, করুনারত্নে ২৩৪*, ধনাঞ্জয়া ১৫৪*) :
করুনারত্নে ক শান্ত ব তাসকিন ২৪৪
লাহিরু থিরিমান্নে এলবিডব্লু ব মিরাজ ৫৮
ওশাদা ফার্নান্দো ক লিটন ব তাসকিন ২০
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ বোল্ড ব তাইজুল ২৫
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা বোল্ড ব তাসকিন ১৬৬
পাথুম নিশাঙ্কা ক লিটন ব এবাদত ১২
নিরোশান ডিকবেলা রান আউট (মিরাজ/লিটন) ৩১
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা বোল্ড ব তাইজুল ৪৩
সুরাঙ্গা লাকমল অপরাজিত ২২
বিশ্ব ফার্নান্দো অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-১০, নো-৩, ও-১০) ২৭
মোট (১৭৯ ওভার, ৬ উইকেট ডি) ৬৪৮
উইকেট পতন : ১/১১৪ (থিরিমান্নে), ২/১৫৭ (ফার্নান্দো), ৩/১৯০ (ম্যাথুজ), ৪/৫৩৫ (ধনাঞ্জয়া), ৫/৫৪৪ (করুনারতেœ), ৬/৫৫৩ (নিশাঙ্কা), ৭/৫৮৫ (ডিকবেলা), ৮/৬৪৭ (হাসাঙ্গা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
আবু জায়েদ : ১৯-২-৭৬-০ (ও-১, নো-১),
তাসকিন আহমেদ : ৩০-৬-১১২-৩ (ও-১),
এবাদত হোসেন : ২১-১-৯৯-১ (ও-৫, নো-২),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৫৮-৬-১৬১-১ (ও-১),
তাইজুল ইসলাম : ৪৫-৯-১৬৩-২,
মোমিনুল হক : ৪-০-১৮-০,
সাইফ হাসান : ২-০-৫-০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল অপরাজিত ৭৪
সাইফ হাসান ক ডিকবেলা ব লাকমল ১
নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড ব লাকমল ০
মোমিনুল হক অপরাজিত ২৩
অতিরিক্ত (নো-২) ২
মোট (৩৩ ওভার, ২ উইকেট) ১০০
উইকেট পতন : ১/২১ (সাইফ), ২/২৭ (শান্ত)।
শ্রীলংকা বোলিং :
সুরাঙ্গা লাকমল : ৮-২-২১-২ (নো-১),
বিশ্ব ফার্নান্দো : ৫-২-১৮-০,
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা : ১১-১-৪৬-০ (নো-১),
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা : ৯-০-১৫-০।
ফল : ড্র।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ০-০ সমতা।
ম্যাচের সেরা : দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলংকা)।