নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় আরও ৬ জনের লাশ উদ্ধার

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ২৯টি লাশ উদ্ধার হয়েছিলো। এ নিয়ে লাশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৫ জনে।

৬ এপ্রিল ভোরে দূর্ঘটনাস্থল শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর থেকে শাহ সিমেন্ট এলাকার মধ্যে এ ছয়টি লাশ ভেসে ওঠে। নদীতে টহল দিতে থাকা নৌ-পুলিশ লাশগুলি উদ্ধার করে।

নৌ পুলিশের এস আই ইউনুস জানান, যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন, মুন্সিগঞ্জের বাগমামুদ আলী এলাকার তোরাব আলীর ছেলে নাজমুল হক খোকন (৪০), ঢাকার মিরপুর-১১ এর রফিকুল হকের ছেলে আজিজুল হক (৫৫), লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম (২৯), মুন্সিগঞ্জের পূর্ব শিলমান্দি খাসকান্দা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (৭৩), মুন্সিগঞ্জ সদরের মালপাড়ার বাসিন্দা গোপি সাহার ছেলে হারাধন সাহা (৪৮)। এরমধ্যে ৩৫ বছর বয়সের একজন অজ্ঞাত পুরুষ রয়েছে।

পরিচয় শনাক্তদেরকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।

সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান জানান, এ ঘটনায় মোট ২৬টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম দিন পাঁচটি, লঞ্চ উদ্ধারের পর আরও ২১টি মরদেহ উদ্ধার হয়। ব্রিফিংয়ের পরে আরও তিনটি লাশ পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল।

৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জে কোর্টগাও এলাকার দোলা বেগম (৩৪), মুন্সীগঞ্জ সদরের রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০), তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সীগঞ্জের মালপাড়ার সুনিতা সাহা (৪০), মুন্সীগঞ্জের উত্তর চর মসুরার পখিনা (৪৫), একই এলাকার বিথী (১৮), তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের মো. শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০), তার এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, মুন্সীগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ন দাস (৬৫), তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২) (ঘটনার সময় সে দাদা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলো, দাদা সাইফুল বেঁচে গেছেন), মুন্সীগঞ্জ সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ঢাকার শনির আখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মুন্সীগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরিয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছাঃ জিবু (১৩), মুন্সীগঞ্জের খাদিজা বেগম (৫০) এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সেলসারদীর মো. নয়ন (১৯)।

৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটি। ছেড়ে যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে পৌছা মাত্র পেছন থেকে এটিকে ধাক্কা দেয় এসকে-৩ নামে একটি কার্গো। কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।

৪ এপ্রিল রাত সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগ দেয় নৌ বাহিনী, কোষ্টগার্ড এর ডুবুরী দল। সঙ্গে যুক্ত হয় বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। তবে রোববার রাতে লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

অপর দিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনার পর পরই কাল বৈশাখী ঝড়ের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হয়। ৫ এপ্রিল সকালে পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় লঞ্চটি নদীর তলদেশ থেকে টেনে তোলা হয়। লঞ্চের ভেতর থেকেই পাওয়া যায় ২১টি লাশ। সবগুলো লাশই ছিল লঞ্চের নিচতলায়।সূত্র:বাসস।