পাঁচ মাসের কোলের শিশুকে আছাড় মেরে হত্যা : পিতার মৃত্যুদণ্ড

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

নিজের পাঁচ মাসের কোলের ছেলে আসিককে হত্যা মামলার রায়ে একমাত্র আসামি শিশুটির পিতা মো. মোস্তফাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। ২৯ নভেম্বর দুপুরে জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন তাঁর আদালতে এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি মোস্তফা শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার দুধনই গজারিজুড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি পলাতক রয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মোস্তফা ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করার সময় জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার টুপকার চরের উজির আলীর মেয়ে রোজিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। বছর দুয়েক আগে তারা টুপকার চরে রোজিনাদের বাড়িতে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর তারা ফের ঢাকায় চলে যান। এরই মধ্যে রোজিনা গর্ভবর্তী হলে তাকে নিয়ে ঢাকা থেকে শ্বশুরবাড়ি টুপকার চলে আসেন মোস্তফা। শ্বশুরবাড়িতে থাকার জায়গা না থাকায় প্রতিবেশী জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির রান্না ঘরে আশ্রিত হিসেবে বসবাস শুরু করেন তারা। একই সাথে মোস্তফা আর ঢাকায় না গিয়ে এলাকায় দিনমজুরি খেটে সংসার চালিয়ে আসছিলেন।

বিগত ২০১১ সালের ২০ মে বিকেলে স্বামীর সাথে মোবাইল ফোনসেট কেনা নিয়ে ঝগড়া হয় স্ত্রী রোজিনার। এর জের ধরে ওইদিনই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মোস্তফা তাদের একমাত্র পাঁচ মাস বয়সের কোলের ছেলে আসিককে দুই পা ধরে রান্না ঘরের ঢেঁকিতে পরপর কয়েকবার আছাড় মারলে শিশুটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় প্রতিবেশীরা মোস্তফাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ ঘটনায় রোজিনা বাদী হয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে তার স্বামী মোস্তফাকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালে মোস্তফা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপন করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে বকশীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম ২০১১ সালের ৩০ জুলাই আসামি মোস্তফার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় পলাতক আসামি মোস্তফাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করে ২৯ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণা করেন জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি নির্মল কান্তি ভদ্র এবং আসামি পক্ষ সমর্থন করেন আইনজীবী মো. নাজমুল ইসলাম কামাল।