রিফাত হত্যা মামলা : অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এরমধ্যে রায়ে ৬ জনের ১০ বছর, ৪ জনের ৫ বছর, ১ জনের ৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে বরগুনার একটি আদালত। বাকি ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। ২৭ অক্টোবর দুপুরে বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

বেলা ১টা ১৫ মিনিটে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। শেষ হয় দুপুর ২ টা ৩৫ মিনিটে। রায়কে কেন্দ্র করে বরগুনার আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ৬৩ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষে আজ এ রায় ঘোষণা হলো।

মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫) মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬) মো. নাইম (১৭) ও মো. তানভীর হোসেন (১৭)কে ১০ বছর করে এবং জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫) ও মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ মহিবুল্লাহ (১৭) কে ৫ বছর করে ও প্রিন্স মোল্লা (১৫)কে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মারুফ মল্লিক (১৭), রাতুল সিকদার জয় (১৬) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)কে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

এরআগে ৩০ সেপ্টেম্বর এই হত্যাকাণ্ডে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার শিশু আদালত। ৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ১৪ অক্টোবর বরগুনা শিশু আদালত রায়ের দিন ধার্য করেন। ১৪ আসামির মধ্যে ৭ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদি হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ছিলো এ মামলার প্রধান সাক্ষি। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ১ সেপ্টেম্বর মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২৭ অক্টোবর সকালে বরগুনা কারাগারে থাকা এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ ছাড়া জামিনে থাকা ৮ আসামি আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে এসেছে। রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ৭জন । এ ছাড়া বাকি সাত আসামি আত্মসমর্পণ করেছিলো। গত ১৪ অক্টোবর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রায় ঘোষণার জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শাহাজাহান মিয়া জানিয়েছেন।