বড়ভাইকে হত্যার দায় স্বীকার ছোটভাইয়ের, বাবা পলাতক

বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

ছোটভাই, বাবা ও নানাসহ চারজনে মিলে বড়ভাই আল আমিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। হত্যার পর পানিতে ডুবিয়ে মরদেহ গুম ও অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ বলে চালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল তারা। কিন্তু নিহতের ছোটভাই আরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় বেরিয়ে এসেছে আল আমিন হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরপর থেকেই পালিয়েছেন মামলার বাদী আল আমিনের বাবা আমিরুল ইসলাম।

ইতিমধ্যে এ হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নিহতের ছোটভাই আরিফুল, নানা আক্তারুজ্জামান দুদু মৌলভী ও তাদের সহযোগী রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন ১৩ আগস্ট দুপুরে তার কার্যালয়ে আল আমিন হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গত ২ আগস্ট বিকেলে জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের পূর্বপাড়দিঘুলী এলাকায় অর্ধ-ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফ মিয়া ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। ওই সময় অজ্ঞাত ওই যুবকের ঘাড় মটকানো, মুখে আঘাতের ক্ষত ও দুই পা লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। ওইদিনই মরদেহ উদ্ধার করে জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরদিন ৩ আগস্ট শেরপুর সদরের শেরপুর পৌরসভার কাজীগলি এলাকার আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে উদ্ধার করা ওই যুবক তার ছেলে আল আমিনের মরদেহ বলে শনাক্ত করেন। ছেলে হত্যার ঘটনায় বাবা আমিরুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ৫ আগস্ট জামালপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেছিলেন।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ থানা এলাকা থেকে নিহতের ছোটভাই আরিফুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আল আমিনকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার স্বীকারোক্তি দিয়েছে আরিফুল।

আরিফুল তার জবানবন্দিতে বলেছে, তার বড়ভাই আল আমিন মাদকাসক্ত ছিল। বাবাকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতো। তাকে বেশ কয়েকবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তিও করা হয়েছিল। বাড়িতে ফিরে আবার সে পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার-নির্যাতন করতো। তার অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়েই তার বাবা আমিরুল, ছোটভাই আরিফুল, নানা আক্তারুজ্জামান ও তার সহযোগী রুবেল মিয়া এই চারজনে মিলে ১ আগস্ট ঈদের দিন কৌশলে শেরপুর থেকে তাকে জামালপুর সদরের তিতপল্লা ইউনিয়নে ডেকে নিয়ে যান। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ওইদিন রাতেই আল আমিনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঘাড় মটকায়ে হত্যার পর দুই পা নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে পূর্বপাড় দিঘুলী এলাকায় ডোবার পানিতে ফেলে দেয়।

আরিফুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ নিহত আল আমিনের নানা জামালপুর সদরের তিতপল্লা ইউনিয়নের পাতিলাকুড়া গ্রামের মো. আক্তারুজ্জামান ও তাদের সহযোগী কাষ্টসিঙ্গা গ্রামের মো. রুবেল মিয়াকে ১১ আগস্ট গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নিহত আল আমিনের ছোটভাই আরিফুল, নানা আক্তারুজ্জামান ও রুবেল মিয়াকে আল আমিন হত্যা মামলার আসামিভুক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আক্তারুজ্জামান ও রুবেল মিয়াও আল আমিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। নিজের ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মামলাটির বাদী আল আমিনের বাবা আমিরুল গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাকেও এই মামলার আসামি করা হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী মামলার বাদীও পরিবর্তন করা হবে।

জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহতের ছোটভাই আরিফুলসহ গ্রেপ্তার তিনজনই আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। মূলত: আল আমিন মাদকাসক্ত ছিল এবং তার বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারধরসহ অত্যাচার নির্যাতন করতো। তার অত্যচারে অতীষ্ঠ হয়েই মূলত তারা এভাবে তাকে হত্যা করে পানিতে ডুবিয়ে রেখে মরদেহ গুম করেছিল। নিহত আল আমিনের বাবা আমিরুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।