কবে চালু হবে বাহাদুরাবাদ ঘাট ফেরি পারাপার

ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাট। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে বাহাদুরাবাদ ঘাট নামকরণ এর সঠিক ইতিহাস, তথ্য খোঁজে পাওয়া না গেলেও অনেকের ধারণা, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্রাট বাহাদুর শাহ এর নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করেছিলেন বাহাদুরাবাদ। ব্রিটিশ আমলে সারাদেশে ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাহাদুরাবাদ নাম পরিচিত। তার মূল কারণ ছিল তৎকালিন ব্রিটিশ সরকার রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সাথে তৎকালিন উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলায় রেল স্থাপন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করেছিলেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, তৎকালিন ব্রিটিশ সরকার এ অঞ্চলে ১৯৩৮ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে যমুনা নদী পথে বাহাদুরাবাদঘাট-ফুলছড়ির তিস্তা মুখঘাট রেল ফেরি চালু করে। ওইসময় ফেরির লাইনের সংখ্যা ছিল ১৩টি এবং একেকটি লাইনে ৩টি করে বগি বা ওয়াগন আনা-নেয়া করা হতো।

ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাট। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ঢাকা রাজধানী তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলা যমুনা নদী দ্বিধা বিভক্তি করে রেখেছিল। তাই এই বৃহৎ দুইটি এলাকা যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যমুনা নদীতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাটে রেলফেরির সার্ভিস চালু করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগর ও ঠাকুরগাঁও সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনে এ ঘাট দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করত। সে সময় রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলে যাত্রী পারাপার, কৃষি পণ্য, ডিজেল, সার সরবরাহসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল স্বল্প ব্যয়ে অল্প সময়ে পরিবহন করা যেতো।

ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাট। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

১৯৮৮ সালে ঐতিহাসিক ভয়াবহ বন্যায় বালাসী ও বাহাদুরাবাদ ঘাট দু’টির নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ঘাটের অবকাঠামো পরিবর্তন করতে হয়। ফলে ১৯৮৯ সালের পরবর্তি যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে ফেরি সার্ভিসটি ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নে বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাটটি সরিয়ে নিয়ে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু নদী ভাঙ্গণের ফলে ঘাট দুটি সংস্কার করতে রেলের ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে রেলওয়ের বার্ষিক বাজেটের উপর তার একটি বড় প্রভাব ফেলে। পরবর্তী ২০০৪ইং সালে ফেরি সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর ২০০৫ সালে ১৪ জুলাই সেতুর উপর রেল চালু হলে তৎকালিন বিএনপি সরকারের আমলে যাত্রীবাহী লোকাল, মেইল ট্রেন ও আন্তঃনগর একতা, তিস্তা, করতোয়া ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণরূপে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। পরবর্তি কিছুদিন সীমিত আকারে মালবাহী ওয়াগন চলাচল করলেও যাত্রীবাহী ফেরি সার্ভিস চলাচল করেতে দেখা যায়নি। ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাথে উত্তর অঞ্চলের দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় বাহাদুরাবাদঘাট ও বালাসীকে কেন্দ্র করে উপার্জনশীল ৩০০-৪০০ হোটেল ব্যবসায়ী, শ্রমিক, মানুষ খেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তারা বেকার হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ঐতিহাসিক বাহাদুরাবাদ ঘাটটি স্মৃতিময় রয়েছে।

এ ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার পণ্য সরবরাহ এবং যাত্রী পারাপারে বহু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে যমুনা নদীতে নৌকা পারাপারে নৌ-ডাকাতি ও নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে আসছে। সেজন্য বর্তমান সরকারের সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী এসে রেলফেরি সার্ভিস চালুর আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। কিন্ত দীর্ঘদিন অতিবাহিতের পরও তা চালু করা হয়নি। এলাকাবাসির প্রাণের দাবি বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে বালাসী ঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচলের।