উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় বাক প্রতিবন্ধী রুকসানা

বাক প্রতিবন্ধী রুকসানা আক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

স্বপ্ন সাহসী প্রতিবন্ধকতা জয়ী রুকসানা আক্তার। সে বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারেনা, লিখে নিজের চাওয়া পাওয়ার কথা জানায় মানুষকে। খুবই মেধাবী। ক্লাসে ব্ল্যাক বোর্ডে শিক্ষকদের লেখা দেখে মুখস্ত করে ফেলে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। এবার মেলান্দহ উপজেলার চর পলিশার জাহানার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে সে। বাবা ওসমান গনি রাস্তার ধারে চা বিক্রি করেন। অশিক্ষিত দরিদ্র বাবা ওসমান কিভাবে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করাতে হবে তাও জানেননা। ভর্তির ফি’র টাকাই বা কোথায় পাবেন। মেয়েকে কলেজে ভর্তি করানোর আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাহলে কি? উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার রুকসানার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। প্রতিবন্ধী জীবন থেকে মুক্তি পেতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে আলো ছড়াতে চায় রুকসানা।

বাক প্রতিবন্ধী রুকসানা আক্তারের (১৭) বাড়ি মেলান্দহ উপজেলার চরবানী পাকুরিয়া ইউনিয়নের চর পলিশা উত্তরপাড়া গ্রামে। বাবা ওসমান গনি চর পলিশা বাজারের সামনে রাস্তার ধারে চা, পুরি সিঙ্গারা বিক্রি করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে বড় সে। ছোট ভাই মঞ্জিল হোসাইনও একই সাথে এসএসসি পাস করেছে। আরেক বোন মনিকা আক্তার ৭ম শ্রেণিতে পড়ে।

রুকসানার মা শাহেদা বেগম (৪৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, বাবা আমাদের টাকা নেই, মেয়ের আশা পূরণ করবো কিভাবে। ৫ বছর বয়সে রুকসানা আমাদের গ্রামের স্কুল চর পলিশা উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের মেয়েরা স্কুলে যায় দেখে তাদের পিছু পিছু স্কুলে যেত। বেশ কয়েকদিন যাওয়ার পর ভাবি মেয়েটা স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকদের ডির্স্টাব করছে। আমি একদিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের বলি, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী কিছু বুঝেনা আপনাদের স্কুলে এসে ডির্স্টাব করছে। এক স্যার বলে উঠেন রুকসানা খুব মেধাবী। মনোযোগ সহকারে প্রতিটি ক্লাস করে। বাধা দিয়েন না আসতে দেন। আগ্রহ দেখে স্যাররা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে নেন রুকসানাকে। বই খাতা কলম কিছুই কিনে দিতে পারি নাই। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে দেখে পড়া মুখস্ত করে প্রথম শ্রেণিতে পাস করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় সে। তারপর রুকসানা পড়ালেখায় স্যারদের সহযোগীতায় ৫ম শ্রেণি পাশ করে জাহানারা লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত প্রাইভেট মাস্টার দিতে পারেনি মেয়েটিকে। প্রাইভেট পড়াবো টাকা পাবো কোথায়।

তিনি আরও বলেন, স্কুল থেকে এসে বাড়ির সকল কাজ সেরে নেন ঝটপটে। আমাকে কিছু করতে দেয় না। আশপাশের লোকজন বিয়ের কথা বললে রাগান্বিত হয়ে খাতায় লিখে জানায়, আগে লেখাপড়া শেষ করবো তারপর বিয়ে। ৫ বছরের মধ্যে বিয়ের কথা বলবেন না।

বাবা ওসমান গনি বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আমি ফুটপাতে দোকান করে তিন ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাইতাছি। রুকসানা এসএসসি পাস করেছে। ওর কলেজে ভর্তি ও কলেজে পড়ালেখার খরচের টাকা কোথায় পাবো। দু:শ্চিন্তায় ঘুম আসে না, মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবো কিভাবে ? তাই প্রতিবন্ধী মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন অসহায় এই বাবা।

জাহানার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, রুকসানা খুবই মেধাবী। কথা বলতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্লাসে খুবই মনযোগী হয়ে ক্লাস করতো সে। ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষকদের লেখা দেখে পড়া মুখস্ত করতো। খাতায় লিখে তা উপস্থাপন করতো। আমরাও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রুকসানার প্রতি সহযোগীতা সহমর্মিতা দেখাতাম। কলেজে ভর্তি হতে পারলে ভাল করবে। রুকসানা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্নে এগিয়ে যাক। তার সাফল্য কামনা করছি।