সরিষাবাড়ীতে জমি দখল ও হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা কামাল গ্রেপ্তার

১৫ জুন বিকেলে হামলার সময় যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন এভাবেই রাম দা উচিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় দেশীয় অস্ত্রের মহরা দিয়ে অন্যের জমি দখল ও সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে ১৬ জুন সকালে ডোয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ। ১৫ জুন বিকেলে কামাল হোসেন ও তার সহযোগীরা একই ইউনিয়নের মাজালিয়া গ্রামে জমির প্রকৃত মালিক ও তার পরিবারের লোকজনদের জমি দখলের পাশাপাশি নগদ পাঁচ লাখ টাকা লুট, অর্ধশত ফলজ ও বনজ গাছ কর্তন এবং কলাবাগান ও সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় মাজালিয়া গ্রামের শাকিলা জামান চান ১৬ জুন সকালে যুবলীগনেতা কামাল হোসেনসহ ২১ জনকে আসামি করে সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ঈমান আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলাটির প্রধান আসামি যুবলীগনেতা কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জামালপুর আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে ঘটনার দিন হামলার সময় কামাল হোসেন তার সহযোগীদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রগুলো পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। এ ব্যাপারে ওই এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সরিষাবাড়ী উপজেলার মাজালিয়া বিলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের কাছ থেকে ১৯৫৩ সালে হাসড়া মাজালিয়া মৌজার ৬১ শতাংশ জমি সাফ কওলামূলে মনিরুদ্দিনের ছেলে মৃত মোজাফফর, মৃত জনো শেখ মালিকানায় ভোগদখল করে আসছিল। ওই জমিতে বসতবাড়ি, পুকুর, কবরস্থান, ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে।

একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানর ছেলে আয়নাল হক, নাতিন মজনু মিয়া তাদের বাপ দাদার জমি দাবি করে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। ওই জমিজমা নিয়ে কয়েক দফায় গ্রাম্য শালিস পর্যালোচনা অনুযায়ী মৃত মোজাফফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, তোষর আলী, শফিকুল ইসলাম ও মৃত জনো শেখের ছেলে চান মিয়া, আলতাব হোসেন, তোতা মিয়া ও লাল চান মিয়া প্রকৃত ভূমি মালিক হিসেবে শালিসনামায় সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১৫ জুন বিকেলে মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আয়নাল হক, নাতিন মজনু মিয়ার পক্ষে ডোয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কামাল হোসেন ও তার ভাই মিনহাজ আহম্মদ বকস্, মজিবর রহমান, হবিবর রহমান, আব্দুল মানান, ফারুক হোসেন , জয়নাল আবদীন, ফরিদ হাসান, আলী আকবর ও তাদের সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র রাম-দা ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ৬১ শতাংশ জমি বেদখল ও গরু ব্যবসায়ী তোষর আলীর বসতঘরে ঢুকে গরু বিক্রির প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তারা করাত মিস্ত্রি সুজা মিয়া, আব্দুল খালেককে দিয়ে প্রকৃত ভূমি মালিকদের প্রায় অর্ধ শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে নিয়ে নিয়ে যায় তারা। এ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা শতাধিক কলাগাছ ও সবজি বাগানের ক্ষতি সাধন এবং জমিতে একটি ছাপরা ঘর তুলে জমি দখল করে।

এ সময় প্রকৃত জমির মালিক আলতাব হোসেন ও তার লোকজনরা বাধা দিতে গেলে যুবলীগ নেতা কামাল রাম দা উচিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের ওপর হামলা চালিয় মারপিট করে। এতে প্রকৃত জমির মালিক আলতাব হোসেন (৪৫), রুবেল (২৪), কাদের (৪৫) তোতা (৩৮), চান মিয়া (৫০), ঝর্ণা (৩২), রওশনারা (৩৮), অনিক (১২), তকির (১৪) ও রিপন (১৩) গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহতদের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মামলাটির প্রধান আসামি ডোয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কামাল হোসেন ১৫ জুন রাতে দাবি করে বলেছিলেন, ‘আমাকেসহ মজনু (৩৫), মজিবর (৪৮), আলী আকবর (১৯) ও ময়নাকে (৪৫) মারপিট করেছে। জমি আমাদের তাই ঘরবাড়ি উঠাতে এসেছি। ওরাই আমাদের বাধা দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান বলেন, ‘মাজালিয়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা, জমি দখল ও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ায় ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলাটির প্রধান আসামি কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটির অন্যান্য আসামি ও দেশীয় অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।