জামালপুরে বিজয়ী আওয়ামী লীগের পাঁচ প্রার্থী, জামানত বাজেয়াপ্ত ২৫ জনের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর জেলার পাঁচটি আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্তদের মধ্যে বিএনপির তিনজন প্রার্থীও রয়েছেন। মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ৩১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় ৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন জামালপুরের কমান্ডিং কর্মকর্তা (সিও) লে. কর্নেল নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. কবির উদ্দিন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান, জামালপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান আকন্দ বাবু, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসতিয়াক হোসেন দিদার, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ডল, দৈনিক আজকের জামালপুরের সম্পাদক এম এ জলিল ও বাংলারচিঠি ডটকমের সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিমসহ বিজয়ী প্রার্থীদের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮২ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ২২ ভোট। ভোটের হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৮২ দশমিক ৩০ ভাগ। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছয়জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মো. আবুল কালাম আজাদ ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পক্ষে পড়েছে শতকরা ৯৭.০৫ ভাগ ভোট।

মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পাওয়ায় বাকি পাঁচজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জানামত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীরা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে মো. আব্দুল মজিদ পেয়েছেন ৫ হাজার ২২৪ ভোট, ন্যাপের কুঁড়ে ঘর প্রতীকে মো. সুরুজ্জামান ৯৯১ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির কাঁঠাল প্রতীকে মো. জাহাঙ্গীর আলম ৯২২ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে এম এ ছাত্তার ৭৫৮ ভোট এবং গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মো. সিরাজুল হক ৪৬০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে ২ লাখ ২১ হাজার ১৮৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৮৯ ভোট। ভোটের হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯০ দশমিক ৩৮ ভাগ। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পাঁচজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. ফরিদুল হক খান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪১৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পক্ষে পড়েছে শতকরা ৯০.৭৫ ভাগ ভোট।

মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পাওয়ায় বাকি চারজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এ ই সুলতান মাহমুদ বাবু পেয়েছেন ১৬ হাজার ৭২১ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে হাফেজ মো. মিনহাজ উদ্দিন ৮২২ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তফা আল মাহমুদ ২১৯ ভোট এবং, সিপিবির কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী মনজুরুল আহসান খান পেয়েছেন ৬১৩ ভোট।

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৮৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৩ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ২২০ ভোট। ভোটের হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯২ দশমিক ৫৬ ভাগ। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছয়জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মির্জা আজম ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১১৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পক্ষে পড়েছে শতকরা ৯৮.১৬ ভাগ ভোট।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ কবীর জামালপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেনের হাতে নির্বাচনের ফলাফল তুলে দেন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের একভাগের কম ভোট পাওয়ায় বাকি পাঁচজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৭৭ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে বুরহান উদ্দিন ১ হাজার ৩৪২ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকে মো. আব্দুল হাকিম শান্তি ৪৬০ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মো. মনজুর আহাদ হেলাল ৪৩২ ভোট এবং সিপিবির কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী শিবলুল বারী রাজু পেয়েছেন ২৯৯ ভোট।

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৮০ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৫৮৩ ভোট। ভোটের হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৮৮ দশমিক ৪৬ ভাগ। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চারজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মুরাদ হাসান ২ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পক্ষে পড়েছে শতকরা ৯৮.২৮ ভাগ ভোট।

মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের একভাগের কম ভোট পাওয়ায় বাকি তিনজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মো. মোখলেছুর রহমান বস্তু পেয়েছেন ১ হাজার ৫৯৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে মো. আলী আকবর ১ হাজার ৫৫০ ভোট এবং বিএনএফ-এর টেলিভিশন প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা বাবুল পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট।

জামালপুর-৫ (সদর) আসনে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪ লাখ ১২ হাজার ১৪৮ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৫১৩ ভোট। ভোটের হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৮৭ দশমিক ৭০ ভাগ। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নয়জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মোজাফফর হোসেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পক্ষে পড়েছে শতকরা ৯১.৫০ ভাগ ভোট।

মোট ভোটদাতাদের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পাওয়ায় বাকি আটজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন পেয়েছেন ৩০ হাজার ৯৭৪ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে সৈয়দ ইউনুছ আহাম্মেদ ২ হাজার ৫০৬ ভোট, সিপিবির কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী শেখ মো. আক্কাছ আলী ৪৮৪ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকে মো. নজরুল ইসলাম আকন্দ ২৮৮ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকে মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ১৪২ ভোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হারিকেন প্রতীকে আল আমিন জুরহমান ১১২ ভোট এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) বাইসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মো. বাবর আলী পেয়েছেন ১০৩ ভোট।

এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে জেলার পাঁচটি আসনে ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। তবে গেজেট প্রকাশের পর প্রত্যেক প্রার্থীর ২০ হাজার টাকার জামানত বাজেয়াপ্ত বিষয়টি কার্যকর হবে।’