বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সজাগ থাকতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি ৮ ডিসেম্বর দুপুরে এখানে ভাটিয়ারির বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ)-তে ৭৬তম বিএমএ লং কোর্সের ক্যাডেট অফিসারদের কমিশন লাভ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট’স প্যারেড-২০১৮ অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এ আহ্বান জানিয়ে তরুণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, একথা মনে রাখতে হবে যে অনেক রক্ত ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এজন্য সকলকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রাষ্ট্রপতি বলেন, যেকোন দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, নতুন কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের কাজের মাধ্যমে এমন নজির স্থাপন করবে যা পরবর্তীদের জন্য অনুসরণীয় হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষতা, মেধা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করবে।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির গৌরব। এই আনন্দের দিনে তিনি সকল নবীন কর্মকর্তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সেনানিবাসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, বিএমএ আজ একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাডেমি। ইতোমধ্যে এখানে ক্যাডেটদের ইনডোর প্রশিক্ষণের সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এ একাডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখন শুধু আমাদের সামরিক একাডেমি দেখতেই আসে না, এখানে প্রশিক্ষণ নিতেও আসে।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১০ বছরে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি এ সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নসহ শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবকাঠামোগত, কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক দশক আগেকার সেনাবাহিনীর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির সমন্বয়ে অনেক বেশি উন্নত, দক্ষ এবং চৌকস।
এরআগে রাষ্ট্রপতি খোলা জীপে চড়ে চৌকস প্যারেড ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পদক প্রদান করেন।
এই প্যারেডের মাধ্যমে ৩৭ জন মহিলা, দু’জন সৌদি আরবের ও এক জন শ্রীলংকার মোট ২৫৭ ক্যাডেট কমিশনপ্রাপ্ত হন।
বিএমএ ৭৬তম লং কোর্সে ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার এ কে এম ইনজামামুল বেস্ট অল রাউন্ড ক্যাডেট নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সোর্ড অব অনার গ্রহণ করেন। এছাড়া সামরিক বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ মান লাভ করায় কোম্পানি সিনিয়র অফিসার ইবনে ইজাজ হাসান চীফ অব আর্মি স্টাফ (সিএএস) স্বর্ণপদক লাভ করেন।
মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টাবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামুদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মশিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ এবং নতুন কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস