তরুণ উদ্ভাবক তৌহিদুল অগ্নিদগ্ধ, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি

ঢাকায় পাঠনোর আগে ২৮ নভেম্বর রাতে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ তৌহিদুল ইসলাম। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠি ডটকম

পুরনো পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উদ্ভাবন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া জাগানো জামালপুরের তরুণ বিজ্ঞানী খ্যাত কৃতী উদ্ভাবক তৌহিদুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর রাতে মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। জামালপুর শহরের ছোটগড় এলাকায় তার প্লান্টে কাজ করার সময় রাত আটটার দিকে এ দুর্ঘটনার শিকার হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, তরুণ উদ্ভাবক তৌহিদুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর রাত আটটার দিকে জামালপুর পৌরসভার ছোটগড় এলাকায় তার পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্লান্টে কাজ করছিলেন। এ সময় প্লান্টে উৎপাদিত গ্যাস নির্গত হয়ে তার প্যান্টে লেগে আগুন ধরে গেলে তিনি মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। আগুনে তার দুই পা ও দুই হাত জলসে গেছে। এ দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তরুণ উদ্ভাবক তৌহিদুলের অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার স্বজন ও শোভাকাঙ্ক্ষীরা তার খোঁজখবর নিতে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান।

জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম খবর পেয়ে রাতেই দ্রুত জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত তৌহিদুলকে রাতেই রেফার্ড করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর সেলিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৌহিদুল ইসলামকে সম্পূর্ণ সরকারিভাবে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি জামালপুরের অতিসাধারণ পরিবারের একজন সন্তান হয়েও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে দেশের অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন। তরুণ এই উদ্ভাবককে সুস্থ করে তুলতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ করছি।

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত জামালপুরের তরুণ কৃতী উদ্ভাবক তৌহিদুল ইসলাম। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

প্রসঙ্গত, জামালপুর সদর উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান ও হালিমা খাতুন দম্পতির ছেলে তৌহিদুল ইসলাম জামালপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। পুরনো আবর্জনা থেকে সংগৃহিত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছেন তিনি। শুধুমাত্র তেলই না, মিথেন গ্যাস ও ছাপাকাজে ব্যবহারের জন্য কালিও বানিয়েছেন তিনি পলিথিন থেকে।

পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উদ্ভাবনের জন্য তৌহিদুল ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে জামালপুর জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সরকারের ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায়’ অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার হিসেবে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা পান তৌহিদুল। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘উদ্ভাবকের খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পুরস্কার হিসেবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ৫ লাখ টাকা এবং প্লান্ট নির্মাণের জন্য আরও ২০ লাখ টাকা অনুদান পান। চলতি বছরের মে মাসে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেনশন, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি প্রদর্শনীতে (আইটেক্স) অংশ নিয়ে পরিবেশ রক্ষা বিষয়ের উদ্ভাবনী কাজের জন্য স্বর্ণপদকও পেয়েছেন। তিনি পান চলতি বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিভাগে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৮।