ঈদে হাজারও পর্যটকের আগমনে মুখরিত শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো

ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রে মাশরুম ছাতার নিচে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত আর পাহাড়ী জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করে দর্শনার্থীরা। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

সুজন সেন, শেরপুর ॥
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড় এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই পরিবার-পরিজন নিয়ে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারও মানুষ। ১৮ জুন সকালে ওইসব উপজেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলার ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র, শ্রীবরদীর রাজার পাহাড় ও নালিতাবাড়ীর পানিহাতা তাড়ানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে পাহাড়, টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ। এ ছাড়া শাল, গজারী, সেগুন বাগান, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, আর লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে শেরপুরের শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতীর কাংশায় গজনীর পাহাড়ি বনাঞ্চলের ২৭০ বিঘা জমিতে অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটি ২০১৪ সালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। পরে অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের সামনে নতুন করে উপস্থাপন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছর যাবৎ শতশত শ্রমিক দিনরাত এক করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা ও ভাস্কর্য মেরামতের কাজ শুরু করে। এখন ডায়নোসর, বাঘ, হাতি, দোয়েল, ঈগলসহ ১৪ প্রকার রংবেরংয়ের ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্রে এবার যোগ করা হয়েছে চিড়িয়াখানা। সেখানে রাখা হয়েছে বিরল প্রজাতির মুরগী, বানর, মেছোবাঘ, হরিণ, সজারু, লজ্জাবতি বানর, বিলুপ্তির তালিকায় থাকা গন্ধগকুল, ঈগল, পেঁচা, টিয়া, তোতাসহ ১২ প্রজাতির পাখি। এ ছাড়া শেরপুর সম্পর্কে পর্যটকদের অবহিত করতে কেন্দ্রে খোলা হয়েছে ব্র্যান্ডিং কর্ণার।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আদর হাসান ও তার স্ত্রী শেফালী হাসান বলেন, অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে নতুন করে পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি হচ্ছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। ছোট ছোট নৌকা করে ঘুরার জন্য রয়েছে লেক। লেকের বুকে নৌকায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গানে অন্যরকম অভিজ্ঞতা পেয়েছি। এ ছাড়া গারো মা ভিলেজে আর মাশরুম ছাতার নীচে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করলাম।

শেরপুর শহরের আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মীর আসাদের বক্তব্য অবকাশ কেন্দ্রে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক আর শিশু কর্ণার তাকে ভিষণ আনন্দ দিয়েছে।

ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র পর্যটকের পদভারে মুখরিত। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

সরেজমিনে ওইসব বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের মধ্যে কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন মুঠোফোনে।

ফুলপুর থেকে আগত দর্শনার্থী দম্পতি সোহেল ও টুম্পা জানান, তারা ঢাকায় থাকেন। তাই ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ছেড়ে গজনী অবকাশে ঘুরতে এসেছেন। পর্যটন কেন্দ্রে তৈরি করা নতুন নতুন ভাস্কর্য তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন, গত ঈদগুলোর চেয়ে এবার প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন হয়েছে। তাই তাদের বিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া ঈদের দিন (১৬ জুন) থেকে আজ (১৮ জুন) পর্যন্ত প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত ছিল গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র এমনটাই দাবি করেন ওই ব্যবসায়ী।

আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *