জামালপুুরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপিত

ডায়াবেটিস দিবসের আলোচনা সভা। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

‘ডায়াবেটিস প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগ’ এই প্রতিপাদ্যে জামালপুরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জামালপুর ডায়াবেটিক সমিতি ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে জামালপুর ডায়াবেটিক সমিতি ১৫ দিনব্যাপী সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও ডায়াবেটিস রোগী জরিপ কার্যক্রম চালায়। সমিতির উদ্যোগে ১৪ নভেম্বর সকালে জামালপুর শহরের কলেজ মোড় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে তমালতলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

দিবসটি উপলক্ষে জামালপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের উদ্যোগে সকাল ১০টায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভযাত্রাটি সিভিল সার্জনের কার্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নজরুল ইসলাম সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক গৌতম রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপ-সিভিল সার্জন চিকিৎসক মোন্তাকিম মাহমুদ সাদী, ইউএইচএসএফপিও সদর চিকিৎসক আকতারুজ্জামান, জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের এসও চিকিৎসক এ টি এম আবু তাহের ও ডায়াবেটিক সমিতি জামালপুরের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক কবি সাযযাদ আনসারী প্রমুখ। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কণিষ্ঠ স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান।

আলোচনায় ডায়াবেটিস রোগের ভয়াবহতা ও গণমানুষের সচেতনতা বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বক্তারা। তারা বলেন, ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষের প্রয়োজনমত প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।

বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, স্ট্রোক ও পঙ্গুত্বের মত কঠিন রোগের ঝুঁকি অনেক গুনে বেড়ে যায়। আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকলে নির্ভয়ে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা যায়। তাই এই রোগ বিষয়ে ভাল ভাবে যেনে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন-যাপন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলা উচিৎ।

তারা আরো বলেন, ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের টাইপ-১ ও টাইপ-২। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সী লোকের টাইপ-১ ডায়াবেটিস বেশি দেখা দেয়। এ ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। বেঁচে থাকার জন্য এই রোগীদের অপরিহার্যভাবেই ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস টাইপ-১ রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীর সংখ্যাই বেশি, এই রোগী প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। এদের শরীরের ইনসুলিন নিস্ক্রিয় থাকে অথবা ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে। এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। প্রয়োজনে কাওকে কাওকে খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন নিতে হতে পারে। বর্তমানে নগরায়নের ফলে পরিবর্তিত জীবন-যাপনের কারণে সারাবিশ্বে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবে বৃদ্ধির এই হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মত দেশগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি।

আলোচনা সভায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল, সিএম অফিস, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়, টিবি ক্লিনিক, এনজিওসহ সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।