জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে চাঁদা না দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত সুপারভাইজার ও সাইট প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৯ জুলাই, বুধবার দুপুরে তারাকান্দি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন।
আহতরা হলেন- সাইট প্রকৌশলী মাজেদুর রহমান ও সুপারভাইজার মো. সানি। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দিগপাইত-সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি বাইপাস মহাসড়কের ৬ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ করছে কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজি লিমিটেড, আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড (জেভি)। ঠিকাদারের লোকজন ৮ জুলাই, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে হাবুর মোড় এলাকায় দুটি ড্রাম ট্রাক ভর্তি বালি ফেলতে যায় কোনাবাড়ী হাবুর মোড় এলাকায়। এ সময় স্থানীয় কোনাবাড়ী গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে নাঈম , ময়েজ উদ্দিনের ছেলে বাচ্চু মিয়া ও সোহরাব হোসেনের ছেলে ফারুকের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল গিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা কাজ বন্ধ করে দেন।
৯ জুলাই সকালে সুপারভাইজার সানি ও প্রকৌশলী মাজেদুর রহমান পুনরায় কাজ শুরু করতে গেলে চাঁদা পরিশোধ না করলে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন ওই যুবকেরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের দু’জনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। আতঙ্কে তারা মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থল ত্যাগের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদের ধাওয়া করে এবং সুপারভাইজারের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন তারা। এ ঘটনায় নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকে নাঈম, বাচ্চু ও ফারুক গা ডাকা দিয়েছেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী চা বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় নাঈম, বাচ্চু, ফারুক মিয়াসহ কয়েকজন ঠিকাদারের লোকজনের কাছে চাঁদা দাবি করে। দিতে না চাইলে বখাটেরা তাদের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তারাও গালিগালাজ ও হুমকির মুখে পড়েন। সরকার যেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ করছে। সেখানে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি করে তা বাধাগ্রস্ত করছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে স্থানীয় সচেতনমহল দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একইসঙ্গে, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক প্রকল্পের কাজ যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় সে জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সড়ক নির্মার্ণের কাজ করলে তাদের টাকা দিতে হবে জানান চাঁদাবাজেরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় দু’জনকে মারধর করে এবং কাজ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এ ঘটনায় তারাকান্দি সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে সন্ধ্যায় তাদের এলাকায় গেলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।