বিএসআরএম ও উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে জামালপুরে হিজড়াদের বার্ষিক সমাবেশ

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

‘ঘুচলো কলঙ্ক, বৈষম্য ও ভীতি, আমরাও মানুষ পেলাম তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি’ এ আবেগময় সুর তুলে ১২ অক্টোবর বিএসআরএম এর আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে হিজড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হিজড়াদের বার্ষিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান।

উন্নয়ন সংঘের চাইল্ড সিটিতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার নির্বাহী পরিষদের সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. ছোহরাব হোসেন, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. রোখশাত শহরীন রুথী, উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম মোল্লা, সাংবাদিক ফজলে এলাহী মাকাম, বন্ধু সোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি তমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম এবং ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লিটন সরকার।

জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান বিএসআরএম এবং উন্নয়ন সংঘের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মতো হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসন তাদের উন্নয়ন, পুনর্বাসন এবং সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে। সরকারি, বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে এদের উন্নয়ন অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।

সমাবেশে হিজড়া সদস্যরা নৃত্য পরিবেশন করেন।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

দেশের সর্ববৃহৎ স্টিল কোম্পানি বিএসআরএম এর আর্থিক সহযোগিতায় উন্নয়ন সংঘ দুই বছর ধরে জামালপুরে হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে।

সমাবেশে স্থানীয় শিল্পী সংগীত পরিবেশন করেন।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

উল্লেখ্য, হিজড়াদের চলমান আয়ের উৎস এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিদ্যমান সুযোগগুলো চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান। এ প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে চাহিদা নিরুপণ নিশ্চিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে। তাদের মাঝে ইতিমধ্যে ট্রেডভিত্তিক ২৫ হাজার টাকা করে ১৪০ জনকে বিনাসুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তারা সফলতার সাথে ব্যবসায়ীক লাভ থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের চিন্তা করা হচ্ছে।

সরকারি, বেসরকারি ও সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে আবাসন সুবিধা, পরিবারে তাদেরকে সংযুক্তি করা, সরকারি ভাতা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করাসহ উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের সম্মান ও মানবাধিকার সুরক্ষার কাজ চলছে বলে উন্নয়ন সংঘ সূত্র জানায়। জামালপুরে প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫০ জন হিজড়া সদস্যদের নিয়ে উন্নয়ন সংঘ কাজ করছে।