সাদির আত্মনাশ সাংস্কৃতিক বুনো উল্লাসেরই প্রতিবাদ

:: সাযযাদ আনসারী ::

‘যে সমুদ্র তলে
মনোদুঃখে আত্মঘাতী
চির-নির্বাপিত ভাতি
শত মৃত তারকার
মৃত দেহ রয়েছে শয়ান
সেথায় সে করেছে পয়ান।’
রবীন্দ্রনাথ

ফিনিক্স পাখি নিজেকে নিজে সংহার করে অনুরূপ ফিনিক্স প্রজন্ম প্রবাহের জন্য। সেতো গ্রিক পৌরাণিক গল্প। বাস্তবে, মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের যাত্রায় দেখি, জান্তব শোষকপোষ্য পুলিশের হাতে ধরা পড়বার প্রাকমুহূর্তে বিপ্লবীরা আত্মবির্সজন করেন— আরও বিপ্লবী বিকাশে অনুপ্রেরণার জন্য। আর মানুষের মুক্তি ও স্বাধীন স্বদেশ জন্ম দেবার জন্য। ফাঁসির মঞ্চেও মানুষ গেয়ে গেছেন জীবনের জয়গান। আত্মবিসর্জনের এমন ত্যাগ, মহত্ব ও গৌরবের। এর বাইরে সাদি মহম্মদের মত পরিণত সঙ্গীতমগ্ন সাধকের আত্মহত্যা গভীর বেদনার, নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ তাঁর এই আত্মনাশ প্রতিরোধহীন পলায়নপরতা ছাড়া আর কি? অথবা সত্যটা কি? এব্যাপারে তাঁর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এই পোড়াদেশে কে পরিমাপ করবে? কেই বা অনুভব করবে এ যে সুন্দরেরই প্রাণের পথযাত্রা দুদণ্ড থমকে যাওয়া। এমনটা যেন আর কারো জীবনে ঘুরে না আসে বিষয়টি গভীর ভাবে ভাবছেই বা কে?

জীবন একবার মাত্র পায় প্রাণী। এটা জেনেও পৃথিবীর অসংখ্য কর্ম-কল্যাণে ভূবনমোহিত মানুষ, সুকৃতির ব্রতচারিগণ অন্তর্দ্বান্দ্বিক লড়াইয়ে পরাভূত হয়েছেন। সম্ভাবনার স্বাপ্নিক জীবন স্তব্ধ করে দিয়ে আত্মঘাতি হয়েছেন। কেন, কি বিষাক্ত অন্তর্গর্ভ জটিল দহনে? কী এমন বিপন্ন বিস্ময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর মন্ত্র পাঠ? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ এক অনির্ণেয় রহস্য।

ম্যাক্সিম গোর্কি আত্মহত্যার বিরুদ্ধে নিরন্তর সোচ্চার ছিলেন। তিনিও নাকি একদিন নিজে নিজের বক্ষকে গুলিবিদ্ধ করেছেন। কাকতালীয়ভাবে চিকিৎসকের প্রাণপণ প্রয়াসে বেঁচে গেছেন। মহান মানুষের আত্মহত্যার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। যারা যুগে যুগে বিশ্বহৃদয় বিদীর্ণ করে মৃত্যুকে নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন। তাঁদের সবার অন্তর্গত আঘাতের আলোড়ন এক নয়। কিন্তু সবার সমাপ্তি এবং প্রতিফল এক। যা সৌন্দর্য্যসাধনার যে নিরন্তর অভিযাত্রা; তাকে অসহায় করে তোলা।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরুচি-সুবোধ সাধক সাদি মহম্মদও তাই করে গেলেন। সাদি মহম্মদের অবাঞ্ছিত জীবনাবসান সর্বময় দুঃখের এবং অগণন হৃদয় পরিমণ্ডল ব্যাপী বিস্তৃত। এ কারণে যে, তিনি তো জানতেন— এমন মৃত্যু ফলবতি নয় মোটেও। এমন দৃষ্টান্তও জানাছিলো তাঁর।

ভ্যানগগ, মায়কোভস্কি, কাওয়াবাতা, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, সিলভিয়াপ্লাথ, এডগার এলেন পো, অ্যানি সেক্সটন, জন ব্যারি ম্যান, ভার্জিনয়া উলফ, আরও অনেকেই নানাবিধ দুঃখ দহনে আত্মঘাতি হয়েছেন। এদের অনেকেই নোবেলসহ নানা পুরস্কারে অলংকৃত। এমন সব সুন্দর ও আনন্দ সাধকের আত্মহত্যার মাধ্যমে ভক্তকুল, অনুগামী প্রজন্মের মনোবিন্যাসে আঘাতই রচনা করে গেছেন। আলো নয়, অন্ধকারের ঘনঘোরেই ডুবিয়ে গেছেন। অবশ্যই ভাসিয়ে তুলেননি আনন্দ সরোবরে। জগতকে বঞ্চিত করেছেন। সুন্দরের, কল্যাণের অভিযাত্রাকে খর্ব করে গেছেন।

এই সব বিপন্ন তিক্ত সত্যও সাদি মহম্মদের বোধপরিমণ্ডলের বাইরে ছিলো না নিশ্চয়ই।

সাদি এদের কারও সাথে তুল্য-মূল্যে বিবেচ্য নয়। তবু তিনি সুকৃতি সাধনায় আমাদের এক অন্তর্গ্রাহ্য শুভ মানুষ ছিলেন। তাই তাঁর এই নিভে যাওয়ার অপুরণীয় ক্ষতিতে আমাদের ক্ষত করে, মন কাঁদে। আমরা তাঁর শূন্যতা পূরণ করতে পারবো না। আক্ষেপটা এখানেই। ভাবতেই ভেঙে যায় ভেতরটা।

প্রশ্ন জাগে—রবীন্দ্রনাথ ও রাবীন্দ্রিক সাধনার মূলমন্ত্র জেনেও সাদি কেন তার ভেতরের বেদনার ঝড় প্রতিরোধে সামর্থ্য হলেন না? একেবারে মৃত্যুর আগেই মৃত্যুই ধ্রুব হয়ে গেলো কেন তাঁর কাছে? এই দুঃখ রচনার দায় কার? অবশ্যই সাদির একার নয়। স্বজন পরিজন, রাষ্ট্র কিংবা আমরাও এড়াতে পারি না। হয়ত বণিক বিশ্বের অধঃপতিত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বুনো উল্লাসে সে বিপন্নমনঃস্তাপে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। হয়ত অনিবার্য বিষন্নতায় মনঃস্তাত্ত্বিক সেবা প্রয়োজন ছিলো তাঁর, হয়ত স্বজন-সাথীদের নিবিড় সান্নিধ্যের তৃষ্ণা ছিলো, সমাজ-রাষ্ট্রের কাছে আন্তরিক আশ্রয়ের আশা ছিলো! যা তিনি পাননি। আমরা তাঁকে দিতে পারিনি।

এই ‘দুঃখ ধরার ভরা স্রোতে’ নানা নারকীয় যন্ত্রণায় জারিত হয়েও নিজের সাথে নিজে লড়াই করে বেঁচে গেছেন, জিতে গেছেন অনেকেই। সাদি কেনো হার মেনে গেলেন! এমন কোন বিষাক্ত আত্মগ্লানি তাঁর অন্তর্গত জানালা ভেঙে মৃত্যুর তীক্ষ্ণ ধারালো দীর্ঘ নখের রোমশ হাত বাড়িয়ে দিলো! রাষ্ট্রের-সমাজের, সহযাত্রীর, কিংবা কোন্ অতৃপ্তির অসার নিস্তব্ধ অন্ধকার ‘উটের গ্রিবার মত এসে’ তাঁর মৃত্যুর পিপাসা প্রখর করে দিলো? যা তাঁর হৃদয়ে বাঁচার বোধ ভেঙে চূর্ণ করে দিয়েছিলো? কেনো মনে হলো তাঁর ‘মৃত্যু কেবল মৃত্যুই ধ্রুব সখা’। সাদির সেই মনবিন্যাসের ক্রান্তিকালে কেউ কি ছিলো না, তাঁর দীর্ঘ দিনে জমাট মনোস্তাপ নিবৃত্তির হাত বাড়াবার? ছিলো শুধু মমতার দূরত্ব। তাই বলে এভাবে যাবে! এভাবে কেন নন্দিত জীবননদীর প্রজ্জ্বলপ্রবাহ, মৃত্যুর বাঁধে চিরস্তব্ধ করে দিলেন সাদি?

সে তো একাত্তুরে পাকিস্তানী জান্তবদের হাতে বাবার নির্মম মৃত্যু, ছিন্নভিন্ন ক্ষতবিক্ষত নিভন্ত দেহ সচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই দুঃসহ শোকের শক্তিতেই তো মুক্তিযুদ্ধের সমুজ্জ্বল সাহসে বেড়ে উঠে হেঁটেছেন অনেক দূর গৌরবের পথ। সেই দুর্জয় আত্মশক্তিতেও কেন পারলেন না সমস্ত বিষাদ বঞ্চনা অতিক্রম করতে? স্বামীর নির্মম মৃত্যুশোক, দগ্ধ চোখের জল জ্বালিয়ে যে মা, সকল কঠোর কঠিন দুর্দৈব দৃঢ় চেতনায় পেরিয়ে ধরে রেখেছিলেন তাঁকে এবং তাঁর পরিবার। সেই মহীয়সী মায়ের প্রবল প্রেরণাও কেন ব্যর্থ করে এভাবে চলে গেলেন? প্রাণপ্রতি মা, প্রয়তর বোনের জীবন বিচ্ছেদ নিশ্চয়ই নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর চিত্তের চরণপাতের স্থল। সেতো সত্যই। সত্যতো কঠিনই। কঠিনেরে ভালোবাসাইতো রবীন্দ্রপ্রেরণা। সাদি তাও মিথ্যা করে দিয়ে চলে গেলেন। শুধু রেখে গেলেন অসহ্য শূন্যতার হাহাকার।

সাংস্কৃতিক পথ পেরোবার পথে পথে তাঁর সাথে প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ অনেক স্মৃতির প্রসাদ আজও হৃদয় রাঙিয়ে আছে। কি করে ভুলি এই সদা সলজ্জ বিনম্র সুবোধ সাংস্কৃতিক স্বজন সাদি ভাইকে!

বরেণ্য মানুষের নয় শুধু, সকল আত্মহত্যাই নিষ্ঠুর এবং অপ্রত্যাশিত। যা বিস্ময় ও বেদনার। সাদি মহম্মদও তাই করে গেলেন। কিন্তু তাঁর তো এমন করার কথা ছিলো না! কেননা সাদি তো রবীন্দ্র অনুগামী একজন রুচিমান শিল্পসিদ্ধ মানুষ। যে রবীন্দ্রনাথ ক্রমাগত মৃত্যুর দহনে দগ্ধ থেকেছেন। যুক্তির অতীত এক অতীন্দ্রীয় সত্যের আভাস-আবেশ মেখে বলেছেন ‘মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান’। তবু কোনোদিন মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করার কথা চিন্তাও করেননি। বরং জীবনে জীবন যুক্ত করতে বলেছেন। বলেছেন ‘যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে, মুক্ত কর হে বন্ধ’, দুঃখনাশী প্রবল প্রেরণায় বলেছেন ‘ব্যর্থপ্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’। বলেছেন ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, সবার মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সারা’। এমনি সহস্র অজস্রভাবে বলেছেন, গেয়েছেন, লিখেছেন।

সাদি মহম্মদের বুকের ভেতরতো গীতাঞ্জলি, গীতবিতান, আর নিবিড় নান্দনিক রাবিন্দ্রিক পাঠ ছিলো। ছিলো ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ এমন হতাশা ভাঙার গান। তবে সাদি ভেতর থেকে কীসের সর্বনাশা ডাক পেলেন? কি এবং কোন ভয়ংকরের দেখা পেলেন? যা তাঁর অসহ্য বোধ হলো? অথবা ‘যে জীবন দোয়েলের ফরিংয়ের তার সাথে মানুষের হয়নিকো দেখা এই জেনে…!’ মানুষ জগৎ-জীবনের গহন গহীনতা সবটা দেখতে পায়না। খুঁজে বাঁচতে হয়। সেই সত্যের সন্ধান থামিয়ে কিসের কোন্ অনন্ত অজানায় নিজেকে নিক্ষিপ্ত করলেন! কেনো ভেতরের বেদনার বার্তাটা বুঝতে দিলেন না কাউকেই! এমনি কোনো অনন্ত অতৃপ্তি গভীরভাবে গ্রাস করেছিলো কি তাঁর মনোজগৎ? প্রকট কোনো বিরম্বিত বঞ্চনা ছিলো হয়ত। সে হতেই পারে। কিন্তু তাঁর বঞ্চনাই বলি আর অভিমানের ক্ষরণ হোক, তাঁর পাশে কেউ দাঁড়াতে পারতেন। তাকে জানা বোঝার অনেকেই আছেন। ছায়ানট, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মত প্রতিষ্ঠানেরও কেউ খোঁজ রাখেনি তাঁর। কেউ এগিয়ে গেলে হয়ত এমন সর্বনাশটা ঘটতো না।

তবু বলবো রবীন্দ্রনাথের গান, ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ কেন তাঁর বাঁচার শক্তি যোগাতে পারলো না? বড় বিস্ময় লাগে!

এখানে মনে পরে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই প্রথম প্রেম বলে আলোচিত বিদূষী বুদ্ধিদীপ্তিময়, সৌন্দর্যে-সচ্ছল, মারাঠি তরুণী আন্না তরখরের কথা। যাকে রবীন্দ্রনাথ ভালোবেসে নাম রেখেছেন নলিনী। নলিনী কবিকে বলেছিলেন — ‘কবি, তোমার গান শুনলে আমি বোধ হয় মরণ দিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।’ আন্নার সাথে কবির এই সম্পর্কের সন্তরণ ছিলো মাত্র মাস দেরেকের। তবে পরষ্পরের অন্তরগামিতা ছিলো জীবনব্যাপী। উভয়ের হৃদয়চারিতার সূত্রই ছিলো গান। শুধু তো আন্নাই নয়। যে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপ্রাণের উজ্জীবন জ্বালিয়ে রেখেছেন বহুমাত্রিক আলোকধারায়। যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানেই ছড়িয়ে রেখেছেন অন্ধজনের আলো, মৃতজনের প্রাণ।

সেই রবীন্দ্রনাথের গান ও দর্শন অর্ধ শতাব্দীর অধিক কাল চর্চা ও সাধনা করে স্বদেশের কোটি মানুষের অন্তর জয়ী সাদি মহম্মদ কেন কেমন করে প্রাণপূর্ণ না হতেই আত্মঘাতী হলেন! এ বড় বিস্ময়। এ এক অনন্ত রহস্য। এ বড় বেদনার মত বেজে চলেছে। সাদি রবীন্দ্রনাথের কত প্রাণে প্রাণ মেলাবার গান, কত ঋতুরূপের গান, আর কত যে মনে ভরসা জাগাবার গান গেয়ে আমাদের প্রাণিত করেছেন তার ক’খানা আর বলা যাবে! সবাইতো সবই জানেন। এত সত্য ও সুন্দর সাধনার জয়যাত্রা গাইতে গাইতে হঠাৎ কি হলো তাঁর! ‘দেখিলো সে কোন ভূত…! নিজেকে নিজেই নিষ্ঠুরভাবে চালান করে দিলেন একেবারে অনন্তের ওপারে! জীবনের এত রঙ! এত মুগ্ধমাধুর্য রূপ! এত সুর ও শব্দের সম্ভাবনা মনে কি এলো না কিছুই! মনে কি হলো না জীবনে জীবন যোগের ব্রতের উচ্চারণ— ‘যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে মুক্ত কর হে বন্ধ…’!

কতবার গেয়েছেন ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।।…। কি মধুমন্দ্রিত কণ্ঠে গেয়েছেন ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে মৃদুল মধুর বংশি বাজে, বিসরি ত্রাস লোকলাজে সজনি, আও আও লো।…’ তবে কি হৃদয়ের গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে সেই প্রাণের মানুষ সাড়া দেয়নি বলে, সকল স্বপ্ন মুছে ফেলে চলে গেলেন। কাঁদিয়ে গেলেন ভাসিয়ে গেলেন।

সাদি মহম্মদের এমন সর্বনাশা মৃত্যুর কারণ নিয়ে বহুমাত্রিক সংশয়, আর নানা ইঙ্গিতের ক্ষেদ উড়ানো হচ্ছে সর্বস্তরে। বিশ্লেষনও হচ্ছে নানা মাত্রায়। যে কথা সবচেয়ে ব্যাপক তাহলো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অন্তত তাঁর মত সংস্কৃতি সাধকের কাছে বিষয়টি নিশ্চয়ই তুচ্ছ।

রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বীকৃতি পুরস্কার সে নাহয় নাই পেলো সেতো কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা অকাতরে পেয়েছেন। উপমহাদেশ নয় শুধু বিশ্ব ব্যাপী গৌরবের এক তীর্থ শান্তিনিকেতন। যা রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব মানব সাধনার সর্বোচ্চ তীর্থ ভূমি। সেই তীর্থে মানব সাধনার সুযোগ ও অধিকার তিনি পেয়েছেন। সতীর্থদের ভালোবাসা গুণি গুরুদের আশীর্বাদ, প্রীতি ও স্নেহ পেয়েছেন অকৃত্রিমভাবে। সেইতো তাঁর পুরস্কার। আর রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে কি এসে যায়? তিনি তো জানতেন এই পৃথিবীর অদ্ভুত আঁধারের কথা; সেই কবে থেকে চলছে এই অনাচার? ‘সবচেয়ে অন্ধ যারা তারা চোখে দেখে বেশি;… যাদের হৃদয়ে প্রেম নেই প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল তাদের সুপরামর্শ ছাড়া…?’ তিনি জানতেন তো এই বিরূপ বাস্তবতা। তা হলে কীসের আঘাত ছিলো তাঁর? অথবা কী এমন অচেনা ঘোরে তিনি বিপন্ন-বিস্ময় বোধে ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন? যা তাঁকে আত্মনাশে বাধ্য করলো?

আমি বিশ্বাস করিনা স্বীকৃতি সংক্রান্ত জলো এবং স্থুল অভিমানে সাদি কোটি হৃদয়কে এভাবে ব্যথায় বিদীর্ণ করে, ছিন্নভিন্ন করে গেছেন। যে যাই বলুন আমার ধারণা, এটা তিনি করেছেন এই অন্যায় অধ্যুষিত অসুন্দর বোধ বিকাশের বিরুদ্ধে আর এই বণিক বিশ্বের নিষ্ঠুর সংক্রমণে সাম্প্রতিক সময়ে সাংস্কৃতিক বুনো উল্লাসের প্রতিবাদে। তা সত্বেও বলবো এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।

এভাবে জীবনের প্রচুর ভারার শূন্য করে ‘আর ঘটনার পুনার্বৃত্তি যেনো না ঘটে’— এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিবিড় নজর চাই।

লেখক: কবি ও সংস্কৃতি কর্মী।