মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে : হারুন হাবীব

জামালপুর প্রেসক্লাব লাইব্রেরিতে নিজের লেখা বই উপহার দেন লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বই। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মোস্তফা মনজু, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেছেন, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে। আমরা স্বাধীন মানচিত্র পেয়েছি। এখন মুক্তিযুদ্ধ শুধু ইতিহাস চর্চাই নয়। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে এক মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব ৫ জুলাই রাতে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব একাধারে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক প্রধান সম্পাদক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক। তার বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বেশ কয়েকটি মূল্যবান বই গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন। তার প্রণীত সেই বইগুলো জামালপুর প্রেসক্লাবের লাইব্রেরিতে উপহার দেওয়া উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, বর্তমান সরকারের টানা তিনবারের মেয়াদে বাংলাদেশের উন্নয়ন অসম্ভব বেড়েছে। আজ থেকে ১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর নেই। কিন্তু তারপরও বলবো এতেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। বাংলাদেশ এখনো উগ্র সাম্প্রদায়িকতায় আক্রান্ত হচ্ছে, তা থেকে কিন্তু আমরা মুক্ত হতে পারছি না। তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে এক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।

দীর্ঘক্ষণ এক আবেগঘন বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ নানা ঘটনা, ব্যক্তি অভিজ্ঞতা ও কষ্ট এবং যুদ্ধকালীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় বিচরণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচর্বণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সাংবাদিকতা, ছবি তোলা এবং এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক কিছুই আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। যুদ্ধকালীন আমার তোলা অসংখ্য ছবি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার লেখা বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনেক দুর্লভ তথ্য উঠে এসেছে। যা পড়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে অনুপ্রেরণা পাবে। এক কথায় আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চাই।

জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এটিএনবাংলার সাংবাদিক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং বাংলারচিঠিডটকমের সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিমের সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবের সহধর্মিনী আসমা পারভীন রচি, উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম দুলাল, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ, দৈনিক আলোচিত জামালপুরের নির্বাহী সম্পাদক কবি সাযযাদ আনসারী, দৈনিক সচেতনকণ্ঠের সম্পাদক মো. বজলুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মনজু, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিন্টু, তরুণ কবি ও সাংবাদিক রাজন্য রুহানী প্রমুখ।

জামালপুর প্রেসক্লাব লাইব্রেরিতে উপহার দেওয়া লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবের বই। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

আলোচনা সভা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব তার নিজের লেখা ১১টি বই জামালপুর প্রেসক্লাবের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ ও পাঠ করার জন্য উপহার দেন। তিনি আলোচনা সভার সভাপতি ও জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের হাতে বইগুলো তুলে দেন। বইগুলো হলো-বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত-তথ্য ও দলিল : পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত-তথ্য ও দলিল : আসাম ও মেঘালয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত-তথ্য ও দলিল : ত্রিপুরা, বঙ্গবন্ধু নবীন সাংবাদকর্মীর চোখে, গণমাধ্যম ১৯৭১, প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম, ছোটগল্প ১৯৭১, ইতিহাসের আলোকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, অনাবিষ্কৃত স্বভূমি, গীত সম্ভার এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ থেকে প্রকাশিত মুজিব জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ।