জামালপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

ব্রহ্মপুত্র নদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বালু তোলার অবৈধ ড্রেজার মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়। ছবি:বাংলারচিঠিডটকম

মাহমুদুল হাসান মুক্তা, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : বালু খেকোদের কবল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে ভাঙনের হুমকিতে থাকা এই নদের পাড়ের জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক রক্ষায় বালু খেকোদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জামালপুর জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসন। ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ব্রহ্মপুত্র নদে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নামে।

অভিযানের সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোনের সাথে জড়িত দুইজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা, চারটি ড্রেজার মেশিন পুড়ানো ও চারটি ড্রেজার মেশিন ভেঙে ধ্বংস এবং বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের পাইপ, ড্রাম ও অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের জামালপুর সদর উপজেলার ছনকান্দা থেকে নান্দিনা খড়খড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা সড়কঘেঁষা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে স্থানীয় একশ্রেণির অসাধু বালুখেকোরা দীর্ঘদিন ধরে শত শত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও ফের বালু তোলা শুরু করে ওই অসাধু চক্রটি। এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসন মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিভিন্ন মহল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ ও পাকা সড়ক রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ আসে। এরপরই জেলা প্রশাসন ও জামালপুর সদর উপজেলা প্রশাসন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে নিয়মিত নজরদারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বালু তোলার অবৈধ ড্রেজার মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়। ছবি:বাংলারচিঠিডটকম

এরই অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তারের নেতৃত্রে একযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তিনটি দল ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় ছনকান্দা এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে স্থানীয় হরিপুর গ্রামের লেবু মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তালতলা এলাকা থেকে মোশারফ হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় নান্দিনা, খড়খড়িয়া, বাদেচান্দি, তালতলা, বানার ও ছনকান্দা এলাকায় চারটি ড্রেজার মেশিন পুড়ানো ও চারটি ড্রেজার মেশিন ভেঙে ধ্বংস করা হয়। এছাড়াও এসব স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের পাইপ, ড্রামের তৈরি ভাসমান পল্টুনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়।

এ অভিযান প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদরের ইউএনও লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে একদিকে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এই নদের পাড়ের জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। অভিযানের সময় ড্রেজার মেশিনসহ বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা এই নদ থকে বালু তোলা পুরোপুরি বন্ধ করতে চাই। এখন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত নজরদারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।