বকশীগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতার পর পালিয়ে থাকা মানুষকে ঘরে ফেরাতে আলোচনা সভা

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদার। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিনে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় ঘটনা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পালিয়ে থাকা নিরপরাধ মানুষকে ঘরে ফেরাতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মেরুরচর ইউনিয়নের হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা স্থানীয় মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেন, কাউকে বিনা দোষে হয়রানি করা হবে না। যারা পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছে তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অযথা কেউ আতঙ্কিত হবেন না। তাই আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা ঘরে ফিরুন, কাজে লেগে পড়ুন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদার।

নির্বাচনী সহিংসতার জেরে মামলা দায়েরের পর জনশূন্য মেরুরচর বাজারের দোকান পাট খুলে দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুন মুন জাহান লিজার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম রাসেল, সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, উপজেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ, রাজিউল হাসান লাভলু, আবদুল লতিফ মজনু প্রমুখ।

জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি মেরুরচর ইউনিয়নের হাছেন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে পুলিশের সাথে একটি পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় কিছু চিহ্নিত দুর্বৃত্ত পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইউএনও মুন মুন জাহান লিজার । ছবি: বাংলারচিঠিডটকম
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম রাসেল। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

এঘটনার পর মেরুরচর ইউনিয়নের চারটি গ্রামের ৯২ জনকে নামীয় ও এক হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর পর থেকে মেরুরচর, ভাটি কলকিহারা, ফকির পাড়া ও বাঘাডুবা গ্রামের মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এতে করে এসব এলাকা গ্রেপ্তার আতঙ্কে জনশূন্য হয়ে পড়ে। এদিকে আতঙ্কিত মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় সরিষা, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। এনিয়ে এসব এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান থানা পুলিশ। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় কেউ ঘরে ফেরেন নি।

অবশেষে ১৪ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় এলাকাবাসীকে হয়রানি না করতে ও তাদের আশ্বস্ত করতে ফের উদ্যোগে নেওয়া হয়। এনিয়ে এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা সভা ও মতবিনিময় করা হয়। আলোচনা সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদার, পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ রাকিবুল ইসলাম রাসেল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা স্থানীয় জনগণকে অভয় দেন। তাদেরকে আগের মত ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি কাজ, ফসল তোলা ও দোকান খোলার জন্য আহ্বান জানান। আলোচনা সভা শেষে মেরুরচর বাজারের বন্ধ দোকানপাট খুলে দেন কর্মকর্তারা।