জামালপুরে মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণে এক এনজিওকর্মী গুরুতর আহত

মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণে গুরুতর আহত সোহেল রানা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে বিকট শব্দে প্যান্টের পকেটে থাকা মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছেন সোহেল রানা (২৫) নামের এক যুবক। প্রথম চাকরির কর্মস্থল জামালপুর শহরের বেলটিয়া খুপিবাড়ী এলাকায় এনজিও গ্রামীণ মানবকল্যাণ সংস্থার (ইউএসএইড) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের কক্ষে ১৯ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সিঁধুলী ইউনিয়নের চরলোটাবর গ্রামের কৃষক লাল মিয়ার ছেলে।

জানা গেছে, সোহেল রানা জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার সরিষাবাড়ী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির জন্য তিনি গ্রামীণ মানবকল্যাণ সংস্থার জামালপুরস্থ ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে আবেদন করলে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। প্রশিক্ষণার্থী কর্মী হিসিবে তিনি ১৯ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই কার্যালয়ে সংস্থাটির পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষে সোফাসেটে বসেছিলেন। এমন সময় তার প্যান্টের ডান পকেটে আগুন ধরে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পকেটে থাকা সিম্ফনি ডি-৫৪ জে মডেলের বাটনফোন সেটটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে তার ডান পায়ের উরুর বেশখানিকটা মারাত্মকভাবে ঝলসে গেছে। মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণের শব্দে ওই কার্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে তারা গুরুতর আহত সোহেল রানাকে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গুরুতর আহত সোহেল রানা বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আমি এই এনজিওতে গত ৯ জুন যোগদান করেছি। আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। এনজিওটির পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাক আহমেদ ১৯ জুন নতুন কর্মীদের সাথে আলোচনা করছিলেন। তখন বেলা সাড়ে ১১টা বাজে। আমি সোফাসেটে বসেছিলাম। হঠাৎ আমার প্যান্টের ডান পকেটে বেশ গরম লাগছিল। তাকিয়ে দেখি প্যান্টের পকেটে আগুন ধরে গেছে। দেখামাত্রই আমি পকেটে থাকা সিম্ফনি ডি-৫৪ জে মডেলের বাটনফোন সেটটি বের করার উদ্দেশে ধরার সাথে সাথেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিকট শব্দে ফোন সেটটি বিস্ফোরিত হয়। অফিসের অন্যান্য কর্মীরা তখন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’

সংস্থাটির পরিদর্শন কর্মকর্তা তিতাসুজ্জামান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে ওই কক্ষে গিয়ে গুরুতর আহত সোহেল রানাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এনজিওটির ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাক আহমেদ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণে মানুষ মারা যাওয়া বা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কেবল সংবাদপত্র, ফেসবুক এবং ইউটিউবেই দেখেছি। কিন্তু আজকে নিজের চোখেই দেখলাম। সোহেল রানার শার্টের পকেটে ফোনসেটটি বিস্ফোরিত হলে হয়তো তাকে আজ বাঁচানোই যেতো না। সেটটি বিস্ফোরণের সময় ছোটখাটো একটি ককটেল বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দে কেঁপে উঠে কক্ষটি। অফিসের অন্যান্য কর্মীরা চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।’

জামালপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. জাকিউল বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘মুঠোফোন সেট বিস্ফোরণে গুরুতর আহত সোহেল রানার চিকিৎসা চলছে। তার ডান পায়ের হাটুর ওপরের দিকে উরুর বেশখানিকটা মারাত্মভাবে দগ্ধ হয়েছে। আপাতত এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ২০ জুন সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দেখার পর বলা যাবে এই হাসপাতালেই তার চিকিৎসা চলবে কি না।’