বকশীগঞ্জে পুলিশের ভুলে নির্যাতনের শিকার এক মাদরাসা শিক্ষক

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক মো. ইকবাল হোসেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের একটি দল যৌতুক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ধরতে গিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছে। ভুল করে নিরপরাধ ব্যক্তি স্থানীয় একটি মাদরাসার সহকারী সুপার মাওলানা মো. ইকবাল হোসেনকে (৫৫) বাথরুম থেকে টেনেহিচড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ধরে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অভিযানে যাওয়া বকশীগঞ্জ থানার এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) চার পুলিশের বিরুদ্ধে।

১৪ এপ্রিল সকালের এ ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ ওই শিক্ষক বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুধু বিবস্ত্র করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ, ধ্বস্তাধস্তির সময় মুখের বেশকিছু দাঁড়িও ছিড়ে গেছে বলে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। ১৫ এপ্রিল বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই শিক্ষকের স্বজনদের অভিযোগে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যৌতুক মামলায় দেড় বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমকে গ্রেপ্তার করতে উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের টাঙ্গারীপাড়া এলাকায় অভিযানে যান বকশীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। তার সাথে আরও তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল। পলাতক আসামি আলম একই উপজেলার বাট্টাজোড় ইউনিয়নের চন্দ্রাবাজ এলাকার নূর হোসেনের ছেলে। আসামি আলম টাঙ্গারিপাড়ায় তার নানার বাড়িতে আত্মগোপনে আছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের দলটি তাকে ধরতে টাঙ্গারিপাড়ায় যাচ্ছিল। পথে সকাল ১০টার দিকে টাঙ্গারিপাড়া আয়েশা খাতুন দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মাওলানা মো. ইকবাল হোসেনের বাড়ির কাছেই আলমকে চিনে ফেলেন পুলিশ। এ সময় আলম দৌড়ে গা ঢাকা দেয়।

পরে পুলিশের দলটি সহকারী সুপার মো. ইকবাল হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ইকবাল হোসেন তখন বাথরুমে ছিলেন। পুলিশের দলটি বাইরে থেকে বাথরুমের দরজা খুলে মো. ইকবাল হোসেনকে বুকের জামায় ধরে টেনেহিচড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। তার মুখের কিছু দাঁড়িও ছিড়ে গেছে। ঘটনা দেখে ওই বাড়ির নারীরা লোকজন ডাকতে চিৎকার দেন। এ সময় স্থানীয় শত শত লোক ওই বাড়িতে গিয়ে এসআই আবু বক্কর সিদ্দিকসহ চারজন পুলিশকে ঘেরাও করে সহকারী সুপার মো. ইকবাল হোসেনকে উদ্ধার করেন।

পুলিশের সাথে ধ্বস্তাধস্তিতে ইকবাল হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গ্রামবাসী ও তার স্বজনরা তাকে দ্রুত বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পুলিশের ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতও পেয়েছেন তিনি।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে বগারচর ইউনিয়নের লোকজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় নঈম মিয়ার বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ। এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি এবং যার বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে কোনো মামলা নেই, এমন একজন নিরীহ মানুষকে বিনা কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্যাতন ও সম্মানহানির ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

মাদরাসাটির সহকারী সুপার মাওলানা মো. ইকবাল হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এই মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। আমার বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে একটি মামলাও নেই। পুলিশ আমাকে বাথরুম থেকে টেনেহিচড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এ সময় তারা আমার কিছু দাড়িও ছিড়ে ফেলেছে। বাড়িতে থাকা আমার স্বজন নারীরা এবং আশপাশের লোকজন আমাকে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। আমার আগে থেকেই হৃদরোগ রয়েছে। ঘটনার সময় থেকেই আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। পুলিশ আমার আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলম এ প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক তিনজন পুলিশ সদস্য নিয়ে ওই এলাকায় যৌতুক মামলায় দেড় বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমকে গ্রেপ্তার করতে যায়। আলম পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই মাদরাসা শিক্ষকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, এমন সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ ওই শিক্ষকের বাড়িতে তল্লাশি করছিল। এ সময় পুলিশ ওই শিক্ষক ইকবাল হোসেনকে বাথরুম থেকে বের করে আনেন। তখন তার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল বলে চিনতে পারেনি তারা। পরে ভুল বুঝতে পেরে পুলিশের দল সেখান থেকে চলে এসেছে। ওই শিক্ষকের সাথে পুলিশ কোনো দুর্ব্যবহার করেনি। ওনাকে বিবস্ত্র করা বা কোনো নির্যাতনও করা হয়নি। একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আর কি।’