জামালপুরে শিক্ষকের অশ্লীল ছবি তুলে টাকা দাবি, দুই কনস্টবল ক্লোজড

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাস্তা থেকে মো. নজির হোসেন নামের এক স্কুল শিক্ষককে জোরপূর্বক আটক করে বাসায় নিয়ে এক নারীর সাথে অশ্লীল ছবি তুলে ২০ লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগে পুলিশের দুই কনস্টবলকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। তারা হলেন কনস্টবল মো. নকিব ও মো. আনোয়ার হোসেন। ৮ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটে। মো. নজির হোসেন জেলার মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা জাহানারা লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি রাতে ওই দুই কনস্টবলের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তবে ডিবির ওসি দাবি করেছেন, ডিবি পুলিশের কেউ ওই ঘটনার সাথে জড়িত নেই।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক নজির হোসেন অভিযোগ করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, তিনি ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের সরদারপাড়া রাস্তায় হেঁটে শহরের পশ্চিম নয়াপাড়ায় তার বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দুই ব্যক্তি সরদারপাড়ার রাস্তা থেকে আকস্মিক তাকে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে শহরের সরদারপাড়ায় এক বাসায় নিয়ে যায়। ডিবি পরিচয়ের দু’জনের মধ্যে একজন ওই বাসার ভাড়াটে। তারা ওই বাসার একটি কক্ষে তাকে আটক রেখে অপরিচিত একজন নারীর সাথে বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি তুলেন। এরপর তারা ওই ছবি দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে তার ক্ষতি হবে বলে ভয়ভীতি দেখান। তারা তাকে প্রায় ছয়ঘন্টা আটক রেখে এ নিয়ে দেনদরবার করেন। এক পর্যায়ে কৌশলে ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা রাজি হয়ে শিক্ষক নজির হোসেন ওই বাসা থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বের হয়েই ফোনে তার স্বজনদের জানান।

সেখান থেকে তিনি শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ে যান। সেখানে তার স্বজনরা ছুটে আসেন। এ সময় ডিবি পরিচয়ের ওই দুই ব্যক্তিও তার পিছু নেন। পাঁচরাস্তার মোড়ে গিয়ে শিক্ষক ও তার স্বজনদের ভিড় দেখে ওই দুই ব্যক্তি দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েন।

ঘটনাটি রাতেই শিক্ষক নজির হোসেন মোবাইল ফোনে জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীকে জানান। ঘটনা জানতে পেরে ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে রাত দেড়টার দিকে জামালপুর ডিবি কার্যালয়ে যান। সাথে করে শিক্ষক নজির হোসেনকেও নিয়ে যান। ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ডিবি পুলিশকে এ ঘটনার সাথে জড়িত ডিবি পুলিশের কনস্টবলকে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন।

পরে ডিবির ওসি মো. ছালেমুজ্জামান ও সদর থানার ওসি মো. নাছিমুল ইসলাম রাতেই কনস্টবল নকিব ও আনোয়ার হোসেনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে নকিব কিছুদিন আগে ডিবিতে ছিলেন। একটি অপরাধের ঘটনায় মাসখানেক আগে তাকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে বদলি করা হয়। তার সহযোগী কনস্টবল আনোয়ার হোসেন জামালপুর পুলিশ কোর্টে কর্মরত আছেন। রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক নজির হোসেন ওই দুই পুলিশ কনস্টবলসহ অজ্ঞাত এক নারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে রাতেই ওই দুই কনস্টবলকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়।

ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী রাতে ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, নিরিহ একজন শিক্ষককে হয়রানি করার কথা শুনে গিয়েছিলাম। আমি এ ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলে এসেছি।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে ৯ জানুয়ারি দুপুরে জামালপুর সদর থানায় এবং ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউ। ডিবির ওসি মো. ছালেমুজ্জামান বলেন, যে দু’জন কনস্টবলকে শনাক্ত করা হয়েছে তারা ডিবির কেউ না। তাদের মধ্যে নকিব পুলিশ লাইন্সে এবং আনোয়ার হোসেন জামালপুর কোর্ট পুলিশে কর্মরত আছেন। তবে শিক্ষকের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাছির উদ্দিন বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, শিক্ষক নজির হোসেনের অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ওই দুই কনস্টবলকে শনাক্ত করে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।