ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার সজীবের এক বছরের জেল

মাজিদুর রহমান সজীব

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর ॥
জামালপুরের ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার মাজিদুর রহমান সজীবকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. জাহিদুল ইসলাম ৮ অক্টোবর রাতে সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের হাজীপুর বাজারে ওই ভুয়া ডাক্তারের মিনি ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। ওই ক্লিনিকটিও সিলগালা করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জানা গেছে, ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে অপচিকিৎসা নিয়ে বহু মানুষ প্রতারিত হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. জাহিদুল ইসলাম ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় সদর উপজেলার হাজীপুর বাজারে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার মাজিদুরের ‘সজীব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কর্ণার’ নামের মিনি ক্লিনিকে অভিযান চালান। এ সময় মাজিদুর তার এমবিবিএস ডাক্তারি পাশের সনদপত্রসহ বৈধকাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। এ সময় বিপুল সংখ্যক ভুক্তভোগীসহ উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় করেন।

পরে রাত আটটার দিকে নির্বাহী হাকিম মো. জাহিদুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভুয়া ডাক্তার মাজিদুর রহমান সজীবকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৪ ও ৫৩ ধারায় ডাক্তারি সনদ ও বৈধ কাগজপত্র না থাকা এবং অপচিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের জীবন বিপন্ন করার দায়ে তাকে এই সাজা দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। একই সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশে তার মিনি ক্লিনিকটিও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম এ রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, মাজিদুর রহমান সজীবের বাড়ি জামালপুর সদরের মেষ্টা ইউনিয়নের বেপারিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। মাজিদুর এসএসসি পাশ না করেই নিজেকে একজন এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাজীপুর বাজারে ‘সজীব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কর্ণার’ নামের একটি মিনি ক্লিনিক খুলে ৪০০ টাকা ভিজিটে চিকিৎসা ও ওষুধ বিক্রি করে আসছিলেন। তার ডাক্তারি প্যাডে এমবিবিএস (এ. মেডিসিন-ইন্ডিয়া), বিসিবিএমসি (কলকাতা), এএমসিসি. (ইন্ডিয়া), সিসিইএমডি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিএ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা এসব পদবি ব্যবহার করা হয়। একই প্যাডে তিনি নিজেকে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও চর্ম, যৌন, বাত, প্যারালাইসিস, পাইলস্ এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার বলে উল্লেখ করেন। শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন তিনি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত রোগী দেখেন।

তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে জামালপুর সদরের কুমারপাড়া এলাকায় জহুরুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম মারা যান। এ ছাড়াও বহু রোগী ও তার লোকজনরা মাজিদুরের কাছে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হয়ে আসছেন। রোগীরা প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকায় বেশ কয়েকবার তিনি জনরোষের শিকার হলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

সর্বশেষ গত ২৬ মে একই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মোহাম্মদ ডালিম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগে জামালপুর সদর আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ৮ আগস্ট ওই মামলায় তার জামিন নামঞ্জুর করে মাজিদুরকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। কয়েক দিন জেলখানায় আটক থাকার পর আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে ফের তিনি তার ক্লিনিক চালু করে রোগী দেখে আসছিলেন।