জৈব সারে স্বাবলম্বী হচ্ছে শেরপুরের নারীরা

কেঁচো সার বিক্রি করে স্বাবলম্বী রাংটিয়া পাতার মোড় গ্রামের কৃষাণী শিউলি খাতুন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সুজন সেন, শেরপুর॥
স্বামী ভ্যান গাড়ি বিক্রি করে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা কিনেছেন। অটোরিকশা কেনার সিংহভাগ টাকাই যোগান দেওয়া হয়েছে কেঁচো সার বিক্রি থেকে। এখন সংসারের অভাব মোচন হয়েছে। শুধু তাই না এক মেয়ে ও দুই ছেলের পড়াশোনার খরচও চালানো হচ্ছে এ থেকেই। কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া পাতার মোড় গ্রামের কৃষাণী শিউলি খাতুন।

তিনি জানান, এক সময় স্বামী নওশেদ আলী অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করতো। আবার মাঝে মধ্যে গারো পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে নিজের ভ্যান গাড়িতে করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতো। খুব কষ্টে দিন কাটতো, ঠিকমতো সংসার চলত না। একসময় বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির কথা। আর দেরী না করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরির কাজ। কিন্তু তার একটি মাত্র গরু থাকায় অন্যের বাড়ির গোয়াল ঘর পরিষ্কারের বিনিময়ে কেঁচো সার তৈরির উপকরণ গোবর নিয়ে আসতেন। এখন তার তৈরি জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে জেলার সদরসহ নালিতাবাড়ী, নকলা, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে। এখন তিনি স্বাবলম্বী কৃষাণী। তার স্বামী এখন ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালান। তার দেখাদেখি ওই গ্রামের প্রায় ২৫ জন নারী কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

তাদের মধ্যে কৃষাণী জুলেখা খাতুন ও শাহিনুর বেগম বলেন, শিউলির দেখাদেখি আমরাও কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরি শুরু করেছি। সার বিক্রির টাকায় সন্তানদের পড়াশোনাসহ সংসারের নানা সমস্যা মেটাতে পারছি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে নওশেদ আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় শিউলির। স্বামীর সম্পদ বলতে ১৫ শতক বসতবাড়ি। খ্বু কষ্টে সংসার চলত তাদের। ২০১৩ সালে তিনি বেসরকারি সংস্থা কারিতাস ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের মাধ্যমে কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির বিষয়ে জানতে পারেন। প্রথমে কারিতাসের সহযোগিতায় এ সার তৈরির বিষয়ে তিনি তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে পাওয়া ১৫টি কেঁচো দিয়ে একটি রিং (সার তৈরি করার পাত্র) দিয়ে সার তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তিনটি রিং ও দুইটি ইটের তৈরি হাউজে সার তৈরি করছেন। সার তৈরির পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে প্রায় একমাস। প্রতি মাসে শিউলি সাড়ে পাঁচ মণ জৈব সার পান। ৩০ টাকা কেজি দরে ওই সার বিক্রি করে প্রায় সাত হাজার টাকা আয় করেন।

কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরি করে শিউলি স্বাবলম্বী কৃষাণী। কৃষিতে জৈব সার ব্যবহারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এমনটা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল বলেন, আমরা তাকে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এর অংশ হিসাবে তার বাড়িতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।