জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট ও গাইবান্ধা জেলার বালাসি ফেরি ঘাট টার্মিনাল নির্মাণ হলেও আজও সম্ভব হয়নি ফেরি চলাচল। ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আট জেলার মানুষকে সড়ক যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রাণের দাবি হলেও এই পথে যমুনা নদীতে নির্মাণ হয়নি সেতু।
বিকল্প পথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে তাদের একদিকে ব্যয় হচ্ছে অধিক সময় ও অর্থ। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দেওয়ানগঞ্জ থেকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি ঘাট নৌপথে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যমুনার পূর্বপাড়ে দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়িকে প্রাধান্য দেন তারা। তাতে দূরত্ব কমে আসবে। যমুনা নদীর চ্যানেল ম্যানেজ করা সহজতর হবে এবং বেঁচে যাবে সরকারের বিশাল অর্থ।
জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ (বালাসি ঘাট) নৌপথে যমুনা নদীতে ফেরি চালু হয়। যমুনার পশ্চিম পাড়ের আটটি জেলা গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাটের মানুষের পূর্বাঞ্চলে ময়মনসিংহ ও ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজীকরণে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস পরিচালনা করত বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু ২০০৭ সালে যমুনায় নাব্যতা সংকট দেখা দিলে বাহাদুরাবাদ ঘাট ও বালাসি ঘাট নৌপথে ফেরিতে যাত্রী পারাপার ও পণ্যবাহী ওয়াগান পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই বাস, ট্রেন বা অন্য যানবাহনে বালাসি ঘাটে এসে নৌকাযোগে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ময়মনসিংহ ও ঢাকায়।
বাহাদুরাবাদ-বালাসি ঘাট নৌপথে আগের মত যাত্রীবাহী ফেরি ও মালবাহী ওয়াগন চলাচলের উদ্দেশ্যে সরকার প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদী খনন ও ঘাট দুটিতে টার্মিনাল স্থাপন করে। ২০১৯-২০২২ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু যমুনার নাব্য ফেরাতে না পারায় কোন কাজে আসছে না টার্মিনাল দুটি।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী দেলোয়ার হোসেন জানান, যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে সরাসরি বাস, ট্রেন বা অন্য যানবাহনে ঢাকা যাতায়াত করা গেলেও এ পথে বেশি সময় লাগে। পাশাপাশি অধিক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বালাসি থেকে দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ী পর্যন্ত সেতু নির্মাণ হলে আট জেলার মানুষ অল্প সময় ও কম খরচে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারত।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বাসিন্দা আজিজুররহমান জানান, বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাট নৌপথে প্রতিদিন শত শত যাত্রী যাতায়াত করে। নৌকায় যাতায়াতে অধিক সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক দিন থেকে শুনে আসছি দেওয়ানগঞ্জ থেকে বালাসি ঘাট নৌপথে সেতু নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সেতু আর হচ্ছে না, আমাদের দুর্ভোগও কমছে না।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, দেওয়ানগঞ্জ থেকে বালাসি ঘাটের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন। সেতু নির্মাণ হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষের যাতায়াতে ব্যাপক সুবিধা হবে এবং সময়ও কম লাগবে।