সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবল : ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবলে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। ৪ অক্টোবর মালদ্বীপের রাজধানী মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।

বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল টি স্পোর্টস।

আগামীকালের ম্যাচের আগে অতীত পরিসংখ্যানে উন্নতি ঘটানোয় মনোযোগী বাংলাদেশ দলের অন্তবর্তীকালিন নতুন কোচ অস্কার ব্রুজন। হেড টু হেড রেকর্ডে ব্লু টাইগারদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লাল সবুজরা। দুই জয় ও ১২ ড্রয়ের বিপরীতে ভারতীয়দের কাছে ১৬ ম্যাচে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ।

গত শুক্রবার সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে টানা সাত ম্যাচে জয়হীন থাকার রেকর্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে জামাল ভুঁইয়ার দল। ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার আগে এই জয়টি বাংলাদেশ শিবিরকে বাড়তি অনুপ্রেরনা যোগাবে।

শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ ওই ম্যাচ জয়ের নায়ক তপু বর্মন। শুক্রবার পেনাল্টি থেকে জয়সুচক একমাত্র গোলটি করেছিলেন তিনি। এতেই জয় খরা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে আসন্ন গুরুত্বপুর্ন ম্যাচটিতেও তপু বর্মনের কাছ থেকে একই পারফর্মেন্স প্রত্যাশা করছেন প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজন।

শুধু তাই নয় ভারতের বিপক্ষে কঠিন লড়াইয়ের আগে ওই জয়টি জামাল ভুঁইয়ার দলকে বাড়তি অনুপ্রেরনা যোগাবে। মালদ্বীপের রাজধানীতে লাল সবুজদের অনুপ্রানীত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে কয়েক হাজার সমর্থক। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও মাঠে উপস্থিত হয়ে প্রিয় দেশকে সমর্থন জুগিয়েছে তারা।

টুর্নামেন্টে যোগ দেয়ার আগে দুটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিল লাল-সুবজ জার্সিধারীরা। ফিলিস্তিন (০-২) ও কিরগিজস্থানের (১-৪) বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই হেরে গেছে তারা। এর আগে গত জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়েও ভারতের কাছে ০-২ গোলে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ।

আজ ম্যাচপুর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ব্রুজন বলেন,‘ ফিফা র্যাং কিংয়ে ভারত ফেভারিট দল। উপমহাদেশের সেরা লীগটির আয়োজকও তারা। দলটিতে বেশ কিছু ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। বাংলাদেশও শক্তিশালী দল। ভাল কিছু অর্জনের লক্ষেই আমরা এখানে এসেছি। কালকের ম্যাচে তাদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আমাদের ছেলেরা। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন ফুটবলে নির্ধারিত দিনে যারা বেশী ভাল খেলবে তাদেরই জয়ের সুযোগ থাকবে। আমাদও খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তাই কাল জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।’

ভারতের বিপক্ষে জয়ের আশাবাদ জানিয়ে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন,‘ আমরা জিততে চাই। জয় ছাড়া কিছু ভাবছি না।’

কালকের ম্যাচকে সামনে রেখে আজ বিকেলে হেনভিরু অনুশীলন পিচে ঘাম জড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। অসুস্থতার কারণে অনুশীলনে যোগ দেননি ডিফেন্ডার রেজাউল করিম।

এদিকে সেরা আবয়বে না থাকা সত্বেও জয় দিয়ে সাফ মিশন শুরু করতে চায় ফিফা র্যাং কিংয়ে ১০৭ তম অবস্থানে থাকা ভারত। আগের চারটি ম্যাচেই জয়হীন ছিল তারা। যে কারণে সোমবার ছন্দে ফেরার চেস্টা করবে দলটি।

ভারত- বাংলাদেশ ম্যাচে সুনীল ছেত্রিই বেশিরভাগ সময় হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের মুল প্রতিপক্ষ। গত জুনে কাতারের দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি পর্বের ম্যাচে তার জোড়া গোলেই লাল-সবুজরা হেরেছিল ভারতের কাছে। সাফের এই ম্যাচেও তাই জামালদের আক্ষেপের নাম হতে পারেন তিনি।

সুনীল বলেন, ‘আমার কাছে প্রত্যেকটি ম্যাচই যুদ্ধের মতো। তাই শেষে মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে। আমাদের শতভাগ উজাড় করে দিতে হবে। কোনও ম্যাচই সহজ নয়।’

তবে নতুন কোচ অস্কার ব্রুজনের অধীনে নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে ভালই অবগত ভারতীয় অধিনায়ক। প্রতিপক্ষকে সমীহ করে তিনি বলেন, কঠিন লড়াই হতে পারে এই ম্যাচে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রতি কোচ পরিবর্তন করেছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা খুবই শক্তিশালী। গত তিন-চার মাস আগে আমরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেছি। কঠিন লড়াই হয়েছিল। সব দলই উন্নতি করেছে। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগুতে চাই। এখন শুধু বাংলাদেশকে নিয়েই ভাবছি।’

শুধু তাই নয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে অস্টম শিরোপা জয়েরও লক্ষ্য ব্লু টাইগারদের। এর আগে ১৯৯৩, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালে সাফ শিরোপা জয় করেছিল ভারত।

আগামী ৭ অক্টোবর পরের ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বাধীন ভারত। ১০ অক্টোবর নেপাল ও ১৩ অক্টোবর লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক মালদ্বীপের মোকাবেলা করবে আসরের অন্যতম ফেভারিট এই দলটি।

বাংলাদেশ দল: শহিদুল আলম, আনিসুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম রানা, রহমত মিয়া, বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মন, রিয়াদুল হাসান, ইয়াসিন আরাফাত, রেজাউল করিম, সোহেল রানা, সাদ উদ্দিন, বিপলু আহমেদ, জামাল ভুঁইয়া, রাকিব হোসেন, সুমন রেজা, তারিক রায়হান কাজী, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মতিন মিয়া, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ফাহাদ, জুয়েল রানা, টুটুল হোসেন বাদশাহ ও মোহাম্মদ হৃদয়।

ভারত – গুরপ্রীত সিংহ সাধু, ধীরাজ সিং মৈরঙ্গথেম, বিশাল কাইথ, প্রীতম কোটাল, সেরিটন ফার্নান্দেস, চিংলেনসানা সিং, রাহুল ভেকে, সুভাষীশ বসু, মন্দার রাও দেসাই, উদান্তা সিং, ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেস, লেলেঙ্গমাওয়িয়া, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আবদুল সামাদ, জেকসন সিং, গ্লান মার্টিনস, সুরেশ সিং, লিস্টন কোলাকো, ইয়াসির মোহাম্মদ, মনভীর সিং, রহিম আলী, সুনীল ছেত্রি ও ফারুখ চৌধুরী।