জামালপুরে কন্যাশিশুকে যৌন নিপীড়ন, থানায় মামলা, নিপীড়নকারী জয় মায়ের জিম্মায়

জামালপুর সদর থানার শিশু কল্যাণ ডেস্কে অনুষ্ঠিত হয় শিশু যৌন নিপিড়নের ঘটনায় প্রবেশন কার্যক্রমের বৈঠক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকায় পাঁচ বছরের এক কন্যাশিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে প্রতিবেশী স্কুলছাত্র রাব্বী হাসান জয়কে বিবাদী করে ২৬ সেপ্টেম্বর জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিবাদী স্কুলছাত্র রাব্বী হাসান জয় শিশু বয়সের হওয়ায় তাকে সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে তার মায়ের জিম্মায় রাখা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকায় ফুফুর বাসায় যৌন নিপীড়নের শিকার কন্যাশিশুটি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বাবা একজন ইজিবাইকচালক। জামালপুর শহরের দড়িপাড়া এলাকায় সপরিবারে ভাড়াবাসায় থাকেন তিনি। ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি তার পাঁচ বছর বয়সের মেয়েকে জামালপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকায় তার কলেজছাত্রী বোনের বাসায় রেখে আসেন। ওই বাসাতেই শিশুটির ওপর পাশবিক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশী সৌদী প্রবাসী জহুরুল ইসলামের ছেলে রাব্বী হাসান জয় ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে শিশুটিকে তার ফুফুর ঘরে একা পেয়ে তাকে যৌন নিপীড়ন করে। জয় শিশুটিকে বিবস্ত্র করে যৌনাঙ্গে আঙুল ঢুকিয়ে আঘাত করলে ব্যথায় চিৎকার দেয় শিশুটি। এ সময় দ্রুত ঘর থেকে কেটে পড়ে জয়। জয় স্থানীয় লাইট হাউজ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিপীড়নকারী রাব্বী হাসান জয়কে বিবাদী করে ২৬ সেপ্টেম্বর জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

জামালপুর সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে সম্পন্ন হয়েছে। সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ড তাদের প্রতিবেদন পেশ না করা পর্যন্ত এখনই বিস্তারিত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

এদিকে অভিযুক্ত জয়ও শিশু বয়সের হওয়ায় আইনি জটিলতা এড়াতে ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে র‌্যাব জামালপুর ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার এম এম সবুজ রানা, জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান, সদর থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জোসনা বেগম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলে মাসুদ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার আব্দুস সালাম, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম, উন্নয়ন সংঘের শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীনসহ মামলাটির বাদী-বিবাদী পক্ষের উপস্থিতিতে সদর থানায় এক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শিশু জয় তার অপরাধের দায় স্বীকার করেছে। ওই বৈঠকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে নিপীড়নকারী শিশু জয়কে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়াসহ আরও কিছু আইনি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, কন্যাশিশুটিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় স্কুলছাত্র রাব্বী হাসান জয়কে বিবাদী করে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তবে জয়ের বয়স ১২ বছরের কম হওয়ায় আইন অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তারের নিয়ম না থাকায় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার মো. আব্দুস সালামের মাধ্যমে তাকে তার মায়ের জিম্মায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৩ সালের শিশু অধিকার আইনের ৪৮ ধারার ক্ষমতাবলে বিকল্পপন্থায় ছয়মাসের মধ্যে নিপীড়নকারী জয়ের সংশোধনের বিষয়ে ওই প্রবেশন অফিসারকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জয়কে সপ্তাহে দু’দিন ওই প্রবেশন অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ছয়মাসের মধ্যে সে সংশোধন না হলে পরবর্তীতে তদন্ত শেষে মামলাটি আদালতে পাঠানো হবে।