প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা দিলেন জামালপুরের রিকশাচালক হযরত আলী

জামালপুরের রিকশাচালক মো. হযরত আলী নিজের গরু বিক্রি করে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও ওষুধ কিনে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে জমা দেন নগদ ১৩ হাজার টাকা। টাকাগুলো গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

মানুষ মানুষের জন্য-এই চিন্তা মাথায় রেখেই করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাদ্য ও ওষুধ কিনে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা দান করলেন জামালপুরের দরিদ্র রিকশাচালক মো. হযরত আলী। ২৮ এপ্রিল বিকেলে তিনি জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানের হাতে টাকাগুলো তুলে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিকশাচালক মো. হযরত আলীর (৬৫) বাড়ি জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া ছাতার মোড় এলাকায়। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে তার। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে শ্রমখেটে খায়। আরেক ছেলে শহরের একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। হযরত আলী ২০০৬ সাল থেকে ঢাকায় রাজারবাগের কুসুমবাগ এলাকায় ভাড়াবাসায় থেকে রিকশাচালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে হযরত আলী নিজেও কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং স্ত্রীকে নিয়ে মাসখানেক আগে ঢাকা থেকে জামালপুরে চলে আসেন।

ঢাকায় রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকার খরচবাদে কিছু টাকা জমিয়ে একটি গরু কিনেন। জামালপুরে তার গ্রাম এলাকায় এক ব্যক্তিকে গরুটি বর্গা দেন। কামাই রোজগার না থাকায় সেই গরুটিও বিক্রি করে দেন তিনি। গরু বিক্রির টাকা থেকে তিনি ১৩ হাজার টাকা করোনায় তার মতোই কর্মহীন হয়ে যারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেন। যেই ইচ্ছা সেই কাজ। তার সেই ১৩ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন তিনি। ২৮ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে তার টাকাগুলো গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান।

এ সময় রিকশাচালক মো. হযরত আলী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গরিব মানুষ। কিন্তু দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালা দেখতাছি না। করোনায় মানুষের মেলা ক্ষতি অইতাছে। মেলা মানুষ অভাবে আছে। মানুষ মারাও যাইতাছে। ওষুধ কিনবার পাইতাছে না। মানুষের এই সমস্ত সমস্যা দেইখা আমার ভালা লাগে না। আমি টাকা দিয়া কি করমু। বাঁচমু কিনা তারও কোনো গ্যারান্টি নাই। আর আল্লায় বাঁচাইয়া রাখলে কামাই মেলা করবার পামু। তাই আমি আমার কষ্টের টাকায় কিনা গরু বিক্রির টাকা থেইকা সামান্য কিছু টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিলাম। উনি যেন এই টাকা দিয়া গরিব মাইনষেরে খাবার ও ওষুধ কিনা দেন।’

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রিকশাচালক হযরত আলীর মতো একজন দরিদ্র মানুষ তার কষ্টের জমানো টাকা থেকে এই যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা জমা দিলেন-এটা একটা মহত্তের লক্ষণ। কারণ ওনি চিন্তা করেছেন যে ওনার চেয়ে বেশি দরিদ্র যারা, তাদের যদি উপকার হয়, সেই চিন্তা থেকেই উনি যেটা করলেন- সেটা অবশ্যই একটি মহৎ কাজ।’

তিনি আরো বলেন, ‘যথাযথ পক্রিয়া অনুসরণ করে উনার টাকাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। উনার এই অবদানের কথা জেলা প্রশাসন সব সময় মনে রাখবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি উনার মতো এমন উদার মনমানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেন বা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যান, তাহলে সবাই মিলেই করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সঙ্কট মোকাবেলা করা খুব সহজ হবে।’