তিস্তা ট্রেনের কামরায় অধ্যক্ষ-ছাত্রীর ঘটনায় তোলপাড়, থানায় মামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কামরা থেকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার একটি বালিকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও জামালপুর শহরের একটি সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শেষবর্ষের ছাত্রীকে আটক করেছে জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ। ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ট্রেনটি জামালপুর রেলস্টেশন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সারা জেলায় বেশ তোলপাড় চলছে। ছবি ভাইরাল হওয়ায়সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ সমালোচনার ঝড় বইছে।

ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীটি কোনো অভিযোগ না করলেও রেলওয়ের আইন ভঙ্গ করার অপরাধে দু’জনকেই আসামি করে রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ৩ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে আদালতে হাজির করা হবে বলে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর বাড়ি জেলার ইসলামপুর উপজেলায়। জামালপুর শহরের একটি সরকারি কলেজে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক সম্মান শেষবর্ষের পরীক্ষার্থী তিনি। অধ্যক্ষের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার সুবাদে পূর্ব পরিচিত ওই ছাত্রী। ২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টার দিকে ইসলামপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামালপুর রেলস্টেশন থেকে ওই ছাত্রীকে সাথে নিয়ে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন অধ্যক্ষ। তিনি ট্রেনটির কেবিন কোচের সিঙ্গেল কামরা বুকিং করে টিকিট কাটেন। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর দু’জনের অশোভন অবস্থান নিয়ে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন যাত্রী। ওই যাত্রীরা ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ সদস্যদের কাছে গিয়েও অভিযোগটি জানায়।

পুলিশ সদস্যরা অধ্যক্ষ ও ওই ছাত্রীকে আটক করে জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানায়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে জিআরপি পুলিশ আটক দু’জনকে প্রথমে ট্রেনটির শেষ গন্তব্যস্থল দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে নামিয়ে রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রাখে। পরে ফিরতি ঢাকামুখী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনেই জামালপুর রেলওয়ে থানায় আনা হয় তাদের। অধ্যক্ষ বিবাহিত এবং জামালপুর শহরের বেলটিয়া এলাকায় তার বাড়ি।

এদিকে সন্ধ্যায় রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অধ্যক্ষ স্যার আমার শিক্ষক। উনি আমাকে বলেছেন তাই তার সাথেই ট্রেনে ইসলামপুরে যাচ্ছিলাম। তার সাথে আমার অন্য কোনো সম্পর্ক নাই। ট্রেনের কেবিনেও তিনি আমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। স্যারের কাছে পুলিশ কি কি পেয়েছে বা তার অন্য কি কি সমস্যা হয়ে তা আমি কিছুই জানি না।’

অধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ আমার কাছে কিছুই পায়নি। মিথ্যা কথা বলছে। দুটি ছেলে কয়েকদিন ধরে আমাকে ফলো করছিল। ওরাই হয়তো আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ষড়ন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাপস চন্দ্র পণ্ডিত বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আটক অধ্যক্ষ ও ছাত্রীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রী তার অধ্যক্ষের দ্বারা কোনোরূপ হয়রানির শিকার হয়নি বলে জানিয়েছে। তাই সে থানায় কোনো অভিযোগও করবে না। অধ্যক্ষও তার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

ওসি আরো বলেন, তবে ছাত্রীটি অভিযোগ না করলেও কিছু যাত্রী যেহেতু আপত্তি তুলেছে রেলওয়ের আইন অনুযায়ী তারা দু’জনই অপরাধী। তাই পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। ৩ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে জামালপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করা হবে।