মেলান্দহে একজন নারী চিকিৎসককে যৌনহয়রানির হুমকি, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানির হুমকি দিয়েছেন তারা মিয়া নামের স্থানীয় এক চা দোকানি। এ নিয়ে প্রতিবাদ চলাকালে তারা মিয়ার ছেলে ও সহযোগীরা লাঠিসোটা নিয়ে ওই নারী চিকিৎসকের কক্ষে হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। ২৭ মে সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মেলান্দহ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, মেলান্দহ পৌরসভার গোয়ালপাড়া গ্রামের চা দোকানি তারা মিয়া তার মেয়ে তাহমিনার এক বছরের কন্যাশিশু মাশরুফাকে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা করাতে ২৭ মে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। বহির্বিভাগের রোগীর টিকিট কেটে শিশু মাশরুফাকে দেখাতে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সাকমো) শিখা খাতুনের কক্ষে যান তারা।

চিকিৎসকের কক্ষে সিরিয়াল ছাড়াই রোগী দেখার আবদার করেন তারা। এ সময় ওই নারী চিকিৎসক রোগীদের সিরিয়াল মতো আসতে বলেন। এতে তারা মিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যান্য সবার সামনেই ওই নারী চিকিৎসককে উচ্চস্বরে অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। এক পর্যায়ে তারা মিয়া তার পরনের লুঙ্গি উচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও যৌনহয়রানির হুমকি দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে গোটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মিয়ার ছেলে জনি ও তার সহযোগীরা লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে হানা দিয়ে ওই নারী চিকিৎসককে মারতে যায়। এ সময় তারাও তাকে অশ্লীল কটূক্তি এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।

এ ঘটনার পর তারা মিয়া গা ঢাকা দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার মেয়ে তাহমিনা খাতুন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি কয়েকজন লোকের সাথে গল্প করছেন ওই নারী চিকিৎসক। এ নিয়ে আমার বাবা কথা বলতে গেলে চিকিৎসক রাগ করেন এবং আমাদের সিরিয়াল মতো আসতে বলেন। তাই আমার বাবাও রাগের মাথায় কিছু কথা বলেছেন।’

এদিকে ওই নারী চিকিৎসক বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘তারা মিয়ার মেয়ের অভিযোগ সঠিক নয়। সিরিয়াল মতো রোগী দেখার কথা বলামাত্রই তারা মিয়া আমাকে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তিনি লুঙ্গি উচিয়ে আমাকে যৌনহয়রানির হুমকি দেন। ঘটনাটি আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি।’

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আরএমও চিকিৎসক আহসান হাবিব আদনান এ ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ওই সাকমোকে লক্ষ্য করে অশ্লীল কটূক্তি ও লুঙ্গি উচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও যৌনহয়রানির হুমকি দিয়েছেন তারা মিয়া। ঘটনাটি ইতিমধ্যে মেলান্দহ থানায় অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে আগামী ২৮ মে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’

মেলান্দহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নীল কমল চক্রবর্তী বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ওই নারী সাকমো তার কর্মকর্তার কাছে যে অভিযোগটি জমা দিয়েছেন, সেটির একটি অনুলিপি আমরা পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে দেখছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে নিয়মিত মামলা নিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক গৌতম কুমার রায় মেলান্দহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। ঘটনা শোনেই সেখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. ফজলুল হককে ময়মনসিংহে বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে কর্মস্থলে তলব করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে মেলান্দহে পৌঁছেছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাকে নির্দেশ দিয়েছি।’