সাংবাদিক শফিক জামানের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে

সাংবাদিক শফিক জামান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এনটিভির জামালপুর জেলা প্রতিনিধি শফিক জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ এপ্রিল বিকেল ৫টায় জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় টেনিস ক্লাব প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে জামালপুর পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সাংবাদিক শফিক জামান ১২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৯টা ২০ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

জানাজার আগে মরহুম শফিক জামানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মুরাদ হাসান, জামালপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম হীরা, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর, বিএনপিনেতা সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী মো. সিরাজুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, সাংবাদিক শফিক জামানের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. আলী আকবর, আব্দুল জব্বার বাবলু প্রমুখ। জানাজায় সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী, জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ, জামালপুর প্রেসক্লাব ও জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেয়।

এদিকে জামালপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় সাংবাদিক শফিক জামানের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও সহকর্মী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক শফিক জামান ১২ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে হৃৎপিন্ডে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে জামালপুর সদর হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য। এ সময় কোনো চিকিৎসক না থাকায় তিনি বাসায় ফিরে যান। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের স্বজন ও সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কোনো ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ও সহকারী পরিচালককের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো গুরুত্ব দেননি।

শুধুমাত্র ইসিজির কর্মচারী তার ইসিজি করেন। এ সময় হাসপাতালের চতুর্থ তলায় মো. কামরুজ্জামান নামের একজন সার্জিক্যাল চিকিৎসক অবস্থান করছেন জেনে রোগীর সাথে থাকা স্বজনরা তার কাছে ইসিজি প্রতিবেদন নিয়ে গেলে তিনি রোগী না দেখেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, তিনি নিজেও হাসপাতালের আরএমও এবং সহকারী পরিচালককে ফোনে সাংবাদিক শফিক জামানের চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলেন। এরপরও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সাংবাদিক মহলসহ জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘সাংবাদিক শফিক জামানকে হার্টস্ট্রোক অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হলে ইসিজি করার পর দু’জন চিকিৎসক পরামর্শ করেছে। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে হার্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিউ) না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে তার চিকিৎসায় কোনো প্রকার অবহেলা করা হয়নি।’

সাংবাদিক শফিক জামানের মৃত্যুতে পরিবারের স্বজন, সাংবাদিক ও সুধীমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার মরহুম আক্রামুজ্জামানের ছেলে শফিক জামান ছিলেন অবিবাহিত। মৃত্যুকালে তিনি তিন ভাই ও এক বোনসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। সাংবাদিক শফিক জামান জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, জাতীয় কবিতা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, উদীচী জেলা সংসদের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে উদীচী জেলা সংসদ ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও পান্তা-ইলিশের আনন্দভোজ কর্মসূচি বাতিল করেছে।