আমরা জেগে স্বপ্ন দেখি এবং বাস্তবায়নও করি : জামালপুরে উন্নয়ন কর্মশালায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান। ছবি : আলী আকবর

জাহাঙ্গীর সেলিম:
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে উঠা বাংলাদেশ আজ পৃথিবীতে বিস্ময়কর এক নাম। অপরদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনপদ জামালপুরকে উন্নয়নের শীর্ষ ১০ জেলায় পরিণত করার জন্য বিগত পাঁচ বছরে এমন কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নাই যা করতে বাকি রেখেছেন সংসদ সদস্য এবং সাবেক সফল বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক জামালপুরের কৃতিসন্তান আবুল কালাম আজাদ। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের সাথে তাল রেখে জামালপুর জেলায় ঈর্ষনীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। আমরা বক্তব্যে বিশ্বাসী নয় কাজ করে প্রমাণ করতে চাই। আমরা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি না জেঁগে স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়ন করি। ২৮ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সৈয়দ আলী মন্ডল পৌর কমিউনিটি সেন্টারে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি স্থানীয়করণ ও জামালপুর জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব উদ্দীপ্তময় কথা বলছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন, ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান, জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) বিপিএম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজিব কুমার সরকার।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

কর্মশালার প্রধান বক্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলামান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানসম্মত করার জন্য নিয়মিত পরিবীক্ষণের স্বার্থে জেলায় একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সতর্ক করে তিনি বলেন কোনো ঠিকাদারের প্রতি ন্যূনতম ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যে কোনো নির্মাণ কাজ প্রাপ্তির সাথে সাথে ঠিকাদারদের এর স্থায়িত্বকাল ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে ১০০ বছরের পরিকল্পনা করতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্বপ্ন দেখেন মানুষকে স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ছাড়েন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফলে মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৮০০ ডলারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে ২০০৬ সালে মানুষের গড় আয় ছিলো মাত্র সাড়ে ৪০০ ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ডলারে।

এসডিজি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ভিডিওতে একটি গান শুনিয়ে বলেন, তুমি আমি সে তাহারা মিলে বাংলাদেশ। আর এই স্বপ্নে বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি দুঃখ করে বলেন, এখানে উপস্থিত সকল সরকারি কর্মকর্তা বুকে হাত দিয়ে বলেন আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন? করেন না। দুর্নীতি থেকে সবাই দূরে সরে আসেন। কেউ রক্ষা পাবেন না। নিজের সন্তানের কাছে লজ্জা না পেতে চাইলে দুর্নীতির মতো ঘৃণিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, জামালপুরকে পশ্চাৎপদতার অন্ধকার থেকে আলোয় উদ্ভাসিত করতে গত পাঁচ বছরে আমি এক মিনিটের জন্যেও সময় নষ্ট করিনি। তিনি গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, রেলপথ, সড়ক, মহাসড়কের উন্নয়ন, টেক্সস্টাইল ইনস্টিটিউট, কলেজ, শেখ হাসিনা সংস্কৃতি পল্লী গড়ে তোলা, বাইপাস সড়ক নির্মাণ, পল্লী একাডেমি, যমুনা নদীতে ফেরি চলাচল চালু করতে বাহাদুরাবাদ-বালাসি ঘাট নির্মাণ, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনসহ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে।

তিনি বলেন, ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীতে টানেল নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন, নকশিপল্লীর কাজ কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে, যমুনা নদীতে ড্রেজিং এর কাজ শুরু হবে। মাহমুদ হাসান রাজা মিয়ার প্রস্তাবিত আধুনিক মানের ব্যক্তিগত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

মির্জা আজম আক্ষেপ এবং ক্ষোভের সাথে বলেন, কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতি বন্ধ না হবে। তিনি বলেন, একটি উপজেলায় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ মাত্র ৮ থেকে ১০ জন লোক যদি অঙ্গীকার করেন তা হলে ওই উপজেলায় কোনো দুর্নীতি থাকবে না। আজ এই কর্মশালায় উপস্থিত ২০০ জন যারা জামালপুর জেলার উন্নয়নের নীতি নির্ধারক তারা যদি অঙ্গীকার করেন তাহলে জেলার ২৬ লাখ মানুষ দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত হবে।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, প্রকৌশলী আর ঠিকাদাররা ভাবেন আমরা কিছুই বুঝি না।

তিনি বলেন, যমুনা নদীতে নৌ ডাকাতি বন্ধে একাধিক নৌ ফাঁড়ি স্থাপন, চর মুন্নিয়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, যমুনার ওপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা দুই ঘন্টার বেশি সময় দেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যমুনার ওই পাড়ে আধুনিক জীবন যাপনের মতো কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। এর ব্যবস্থা হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, বর্তমান ঠিকাদারগণ এমন কাজ করেন রাস্তা নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই চলাচলের অনুপযোগি হয়ে যায়। জামালপুর সদরে কানোরূপ দুর্নীতি, অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমি বেঁচে থাকতে কোনো দুর্বৃত্ত এই মাটিতে ঠাঁই পাবে না। তিনি দুঃখের সাথে বলেন, সারা জেলায় অভাবনীয় উন্নয়ন হলেও জামালপুর সদর উপজেলার রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্টসহ চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন সাধিত হয়নি। তিনি বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সদরের উন্নয়নে আপনাদের একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ক্ষোভের সাথে বলেন, জামালপুরে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজগুলো মানসম্মত হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঠিকাদাররা মোটেই ভালো কাজ করছে না। তারা টাকা রোজগারের ধান্ধাতেই ব্যস্ত থাকে। প্রত্যেকটি কাজ তদারকি করার জন্য তিনি একটি কমিটি গঠনের আহবান জানান।