ঢাকা ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

শ্রীবরদীতে আমন ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ

শ্রীবরদীর শেখদি গ্রামের কৃষক সুরুজ আলীর আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

শ্রীবরদীর শেখদি গ্রামের কৃষক সুরুজ আলীর আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সুজন সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কোন কোন কৃষক ছত্রাকের আক্রমণের ভয়ে ধান পাকার আগেই তা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ধানের ফলন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক। অন্যদিকে ছত্রাক দমনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগীতা পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অনেক কৃষক ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল । তবে তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৮শ ৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-৪৯, ব্রি-৬২, বিআর-১১, ধানীগোল্ড, এজেড, বিনা-৭ সহ কয়েকটি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশীয় জাতের মধ্যে চাষ হয়েছে পাইজাম, তুলশীমালা, কালোজিরা, হালই, গোলাপি ও চাম্পালিসহ বিভিন্ন জাতের ধান।

কুরুয়া গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া আমন চাষের অনুকুলে ছিল। তাই আশায় ছিলাম বাম্পার ফলনের। এরই মধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। তবে হঠাৎ করেই বেশিরভাগ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ছত্রাকের আক্রমণ। এটা আঞ্চলিকভাবে লক্ষিগোয়ের (ছত্রাক) আক্রমণ বলা হয়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ ছত্রাকের আক্রমণের মাত্রা । তবে সবচেয়ে বেশী আক্রমণ হয়েছে ব্রি-৪৯ জাতের ধান ক্ষেতে।

উপজেলার শেকদি গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করছিলাম। আর কয়দিন পর পাকতে শুরু করতো। এখন পুরো ক্ষেতেই ছত্রাকের আক্রমণ। ধার দেনা কইরা আবাদ করছিলাম ছত্রাকের আক্রমণে সব শেষ হইয়া গেল।

পার্শ্ববর্তী মাটিয়াকুড়া গ্রামের কৃষক হাবিবর, মছল উদ্দিন, আমজাদ, ছালাম, এবরা মিয়া, হাকিম মাষ্টার, আহমদ মেম্বারসহ আরো অনেকের ক্ষেতের অবস্থাও একই রকম। তারা বলেন, যারা ধান আগে কাইট্টা নিয়া গেছে তারা ফলন কম পাইবো। এছাড়াও ওই ধানের চাইল (চাল) দিয়া রান্না করলে ভাত তিতা লাগবো।

পুটল গ্রামের কৃষক জয়নাল আবদিন জানান, তার মত হাজারো কৃষকের ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, উপজেলার প্রায় সব গ্রামের ধান ক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছেনা। দু’একজন কৃষক কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের সুপারভাইজারদের পরামর্শ নিয়ে ক্ষেতে কীট নাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল হচ্ছেনা।

যেসব ক্ষেতের ধান আশি শতাংশ পেকেছে ও ছত্রাকের আক্রমণ করেছে ওই সমস্ত ক্ষেতের ধান কৃষকদের কেটে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ছত্রাক ধ্বংসকারী নুইং পাউডার প্রয়োগ করে কিছুটা দমন করা সম্ভব বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসান। তিনি দাবি করেন, আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো বাঁধা সৃষ্টি হবেনা। এছাড়া যে সব ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে ওইসব ক্ষেতের ধান দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যাবেনা বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবাসীদের কল্যাণ বিষয়ে জামালপুরে এনজিওদের সাথে সমন্বয় সভা

শ্রীবরদীতে আমন ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ

আপডেট সময় ০৭:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৮
শ্রীবরদীর শেখদি গ্রামের কৃষক সুরুজ আলীর আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সুজন সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কোন কোন কৃষক ছত্রাকের আক্রমণের ভয়ে ধান পাকার আগেই তা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ধানের ফলন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক। অন্যদিকে ছত্রাক দমনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগীতা পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অনেক কৃষক ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল । তবে তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৮শ ৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-৪৯, ব্রি-৬২, বিআর-১১, ধানীগোল্ড, এজেড, বিনা-৭ সহ কয়েকটি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশীয় জাতের মধ্যে চাষ হয়েছে পাইজাম, তুলশীমালা, কালোজিরা, হালই, গোলাপি ও চাম্পালিসহ বিভিন্ন জাতের ধান।

কুরুয়া গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া আমন চাষের অনুকুলে ছিল। তাই আশায় ছিলাম বাম্পার ফলনের। এরই মধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। তবে হঠাৎ করেই বেশিরভাগ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ছত্রাকের আক্রমণ। এটা আঞ্চলিকভাবে লক্ষিগোয়ের (ছত্রাক) আক্রমণ বলা হয়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ ছত্রাকের আক্রমণের মাত্রা । তবে সবচেয়ে বেশী আক্রমণ হয়েছে ব্রি-৪৯ জাতের ধান ক্ষেতে।

উপজেলার শেকদি গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করছিলাম। আর কয়দিন পর পাকতে শুরু করতো। এখন পুরো ক্ষেতেই ছত্রাকের আক্রমণ। ধার দেনা কইরা আবাদ করছিলাম ছত্রাকের আক্রমণে সব শেষ হইয়া গেল।

পার্শ্ববর্তী মাটিয়াকুড়া গ্রামের কৃষক হাবিবর, মছল উদ্দিন, আমজাদ, ছালাম, এবরা মিয়া, হাকিম মাষ্টার, আহমদ মেম্বারসহ আরো অনেকের ক্ষেতের অবস্থাও একই রকম। তারা বলেন, যারা ধান আগে কাইট্টা নিয়া গেছে তারা ফলন কম পাইবো। এছাড়াও ওই ধানের চাইল (চাল) দিয়া রান্না করলে ভাত তিতা লাগবো।

পুটল গ্রামের কৃষক জয়নাল আবদিন জানান, তার মত হাজারো কৃষকের ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, উপজেলার প্রায় সব গ্রামের ধান ক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছেনা। দু’একজন কৃষক কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের সুপারভাইজারদের পরামর্শ নিয়ে ক্ষেতে কীট নাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল হচ্ছেনা।

যেসব ক্ষেতের ধান আশি শতাংশ পেকেছে ও ছত্রাকের আক্রমণ করেছে ওই সমস্ত ক্ষেতের ধান কৃষকদের কেটে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ছত্রাক ধ্বংসকারী নুইং পাউডার প্রয়োগ করে কিছুটা দমন করা সম্ভব বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসান। তিনি দাবি করেন, আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো বাঁধা সৃষ্টি হবেনা। এছাড়া যে সব ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে ওইসব ক্ষেতের ধান দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যাবেনা বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।