সরিষাবাড়ীতে দেয়াল টপকিয়ে বিদ্যালয়ে যায় শিক্ষার্থীরা

সীমানা দেয়াল টপকিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী ॥
যাতায়াতের পথে পানি; দেয়াল টপকানোই ভরসা! শ্রেণিকক্ষ ও মাঠে চারমাস ধরে জলাবদ্ধতার জন্য পাঠদান চলে স্যাঁতসেতে বারান্দায়। নোংরা, দুর্গন্ধ ও দুষিত পানির কারণে ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। এমনই চিত্র জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের ১৩ নম্বর চেচিয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চেচিয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিনই অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয়ের এ অচলাবস্থা। টানা চার মাস ধরে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের পথে। মাঠে জমে থাকা নোংরা ও দুর্গন্ধ পানিতে পা চুবিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করায় প্রায়ই পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বই-খাতা। অনেকের পায়ে চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ আক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে এখন নিয়মিত সীমানা দেয়াল টপকিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আশেপাশের সবগুলো পুকুর-ডোবা ভরাট হয়ে ওই বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী দুই শতাধিক ঘরবাড়ি জলাবদ্ধতার শিকার। এতে স্থানীয় লোকজনের দৈনন্দিন স্বাভাবিক চলাফেরা এবং ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও খেলাধুলার পরিবেশ ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে।

সীমানা দেয়াল টপকিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

পঞ্চম শ্রেণির লাবিব, আশিকুল, চতুর্থ শ্রেণির সুবর্ণা, রাজিব, তৃতীয় শ্রেণির আদুরী, জান্নাতসহ অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানায়, মাঠে পানি থাকায় বিদ্যালয়ে আসা কষ্টকর। খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। গর্তে পড়ে প্রায়ই ব্যথা পেতে হয়। অনেকেরই পায়ে চুলকানি হয়েছে। বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকিয়ে আসতে হয়। এতে অনেকে পড়ে আঘাত পায়, জামা-কাপড় ছিড়ে যায়। এ ছাড়া সব জায়গাতে পানি থাকায় প্রস্রাব-পায়খানা করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

পাখিমারা গ্রামের আব্দুস সামাদ, কান্দারপাড়ার শাহজাহান আলীসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে। বিদ্যালয়ে যেতে চায় না, বাচ্চাদের হাতে-পায়ে ঘাঁ ধরে গেছে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

সহকারী শিক্ষিকা কোহিনুর খাতুন, জমিলা বেগম, সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, চাকুরি শেষে বয়সে এসে বিদ্যালয়ের দেয়াল টপকিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কখন যে দুর্ঘটনার শিকার হই বলা যায় না, বিদ্যালয়ের পিয়ন কয়েকদিন আগে গুরুতর ব্যথা পেয়েছে। বাথরুমেও যেতে পারি না, এ দুর্ভোগ বলতেও লজ্জা লাগে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আকলিমা খাতুন বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের। সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ ভরে যায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সরকারি বরাদ্দ বা স্থানীয় বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে মাঠে মাটি ভরাটের মাধ্যমে এ মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।

পানি ভেঙে শ্রেণি কক্ষে যাওয়া আসা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যাটি জেনেছি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা শিক্ষা দপ্তর থেকে করা সম্ভব না, স্থানীয়দের দায়িত্ব। তবে সংস্কার তালিকায় এ বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়েছে, বরাদ্দ হলে কিছু কাজ করতে পারবে।

পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে যে বরাদ্দের প্রয়োজন তা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে অপ্রতুল। তবে তিন-চার লাখ টাকার মধ্যে হলে উদ্যোগ গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।